মমতার চার দশক
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: রাজনৈতিক জীবনে জনপ্রতিনিধি হিসাবে চার দশক কাটিয়ে ফেললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, একাধিক পরিচয় এসেছে এই সুদীর্ঘ যাত্রাপথে।
কালীঘাটের একেবারে সাধারণ পরিবারের মেয়ে থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলার তথা দেশের দিদি।
সাতের দশকে কংগ্রেসের হাত ধরেই মমতার রাজনৈতিক জীবন শুরু। যোগমায়া দেবী কলেজে পড়াকালীন তাঁর রাজনীতির হাতেখড়ি। ১৯৭৬ সালে মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। কয়েক বছরের মধ্যে প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক।
১৯৮৪ সালে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে সিপিএমের প্রার্থী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে প্রথমবারের জন্য লোকসভায় পা রাখেন মমতা। জীবনের প্রথম নির্বাচনেই সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো প্রার্থীকে হারিয়ে সকলকে চমকে দেন। ভারতের সংসদীয় রাজনীতি পুরুষতান্ত্রিক, আটের দশকে ইন্দিরাপরবর্তী যুগে সেই রাজনৈতিক মিথ ভাঙলেন মমতা। হয়ে উঠলেন জায়েন্ট কিলার।
১৯৮৯ সালের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজয়ের মুখ দেখতে হল। মালিনী ভট্টাচার্যের কাছে যাদবপুর কেন্দ্রে হেরে যান তিনি।
১৯৯১ সালে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে ফের দাঁড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লোকসভায় গেলেন। দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্র থেকে বিপ্লব দাশগুপ্তকে হারিয়ে, নরসিমা রাও সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন, ক্রীড়া, যুবকল্যাণ, নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী হলেন। সেই প্রথমবারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের রাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন মমতা।
সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে ১৯৯৩ সালের ২১শে জুলাই মহাকরণ অভিযানে পুলিশের হাতে আক্রান্ত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৩ জন যুবকংগ্রেসকর্মী পুলিশের গুলিতে নিহত হল। এরপর থেকে ২১শে জুলাই তৃণমূল শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে চলেছে।
১৯৯৭ সালে কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৯৮-এর পয়লা জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেস নামে নতুন দল গড়লেন।
১৯৯৯ সালে নতুন দল গঠনের পরই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের শরিক হলেন। প্রথমবারের জন্য রেলমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম পূর্ণমন্ত্রী হলেন।
২০০১ সালে মতবিরোধের কারণে এনডিএ ত্যাগ করলেন। ২০০১-এ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লড়লেন। নির্বাচনে হারে পর সেই বছরই ফের এনডিএ-তে যোগ দিলেন।
২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য শোচনীয় পরজায় ঘটে তৃণমূলের। রাজ্যে শুধু মাত্র একটি আসনে, দক্ষিণ কলকাতা থেকে তৃণমূলের প্রতীকে জয়ী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এবার কয়লা এবং খনি দপ্তরের পেলেন মমতা।
২০০৬ সাল, সিঙ্গুরের কৃষি জমি বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন মমতা। সিঙ্গুর আন্দলন মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজৈনৈতিক জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। জাতীয় রাজনীতি থেকে তিনি রাজ্য রাজনীতির চালকের আসনে এসে পড়লেন।
২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনার প্রতিবাদে সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর আন্দোলনের স্রোতে বঙ্গ রাজনীতির হাওয়া পাল্টাতে শুরু করল।
২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদে জয়ী হল তৃণমূল কংগ্রেস। বাংলায় ঘাসফুলের রাজনৈতির জমি শক্ত হল। রাজ্যে পালাবদল আসতে শুরু করল।
২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট করে, মমতার নেতৃত্বে ৪২ টি আসনের মধ্যে ২৬টি তেই জোট জয়ী হয়। ২০১০ সালে কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে, ছোট লাল বাড়ির দখল নেয় তৃণমূল কংগ্রেস।
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচন তৃণমূল এবং কংগ্রেস জোট রয়েছে, ২৯৪ আসনের মধ্যে ২২৭ আসনে জয়ী মমতার নেতৃত্বাধীন জোট। যে লাল বাড়ি থেকে টানতে টানতে একদিন মমতাকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, সেই মহাকরণেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ৪২ টি আসনের মধ্যে ৩৪টিতেই জয়ী হল তৃণমূল কংগ্রেস, জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধী তথা দেশের অন্যতম শক্তিশালী বিরোধী শক্তি হয়ে উঠে আসার সেই শুরু।
২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে একা লড়ে বাম-কংগ্রেস জোটকে উড়িয়ে দেয় মমতার তৃণমূল। ২৯৪ আসনের ২১১টিতেই জয়ী তৃণমূল। দ্বিতীয়বার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন রাজ্যে বিজেপির উত্থান ঘটল। বামেরা ক্ষয়ে ক্ষয়ে শেষ, ক্ষয়িষ্ণু কংগ্রেস, রাজ্যে বিরোধীর জায়গা নিল গেরুয়া শিবির। ভোট বাড়লেও আসনে কমে কিছুটা ধাক্কা খায় তৃণমূল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। ৩৪ থেক কমে আসন হয়ে দাঁড়ায় ২২। বিজেপি পায় ১৮টি।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফের মমতার কমব্যাক। ২১৫ আসন জিতে তৃতীয়বারের জন্য মসনদে বসেন মমতা। তারপর পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল জয়।
২০২৪, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভোট। বিরোধী শক্তি কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় ফের আটকে গেলেন মোদী-শাহ। সিট বাড়িয়ে ২৯ জন সাংসদকে লোকসভায় পাঠালেন মমতা। মজবুত হল বিরোধী রাজনীতির পরিসর।