রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

লক্ষ্য ২৬-এর নির্বাচন! অথচ সংগঠন সাজাতে নাজেহাল অবস্থা বঙ্গ বিজেপিতে

July 22, 2024 | 3 min read

বঙ্গ বিজেপি

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বঙ্গ বিজেপিতে ফের আদি- নব্য দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে। দু’ভাগ বঙ্গ বিজেপি! লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পর প্রথম ১৭ জুলাই কলকাতায় কর্মসমিতির বৈঠকে বসে বঙ্গ বিজেপি। আর এদিনই বিজেপির কার্যালয় মুরলীধর সেন লেনের সামনে বিক্ষোভে দেখায় ‘আদি’ বিজেপি শিবিরের একাংশ। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ অন্যান্য পদ্ম নেতৃত্বকে নিশানা করে আদি বিজেপি পরিবার, বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের নামে পোস্টারও প্রকাশ করে।

একুশের পর চব্বিশেও বঙ্গে ‘ধরাশায়ী’ বিজেপি। আগের থেকে লোকসভায় আসন সংখ্যা কমেছে। হেরে গিয়েছেন একের পর এক হেভিওয়েট পদ্ম প্রার্থী। যদিও বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, আসন সংখ্যা কমলেও ভোট বেড়েছে বিজেপির। চব্বিশের লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পর বুধবার ছিল রাজ্য বিজেপির কর্মসমিতির বর্ধিত কমিটির প্রথম বৈঠক। সেই বৈঠকে এক এক জন নেতার এক এক রকম বার্তা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কথায়, ”রাজ্যে আমাদের একটা স্টপেজ হয়েছে। এখনও গন্তব্যে পৌঁছইনি। শুধুমাত্র একটা স্টপেজ হয়েছে। ছাব্বিশের বিধানসভাকে সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যেখানে আমাদের ক্ষত বা রক্তক্ষরণ হয়েছে সেই জায়গাতে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা সঙ্ঘবদ্ধ রয়েছি।”

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, ”আগে ভোট করাতে হবে।উপদ্রুত এলাকা আইন লাগু করে ভোট করতে হবে। রাষ্ট্রপতি শাসন চাই না। নবান্ন চাই না। যেদিন ভোটে জিতব সেদিন ঢুকব।” বিজেপির বাহুবলি নেতা হিসেবে পরিচিত অর্জুন সিং বলছেন, ”আপনি ভোট করাবেন কি করে। সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে। তাই তো ভোট করাতে পারা যাচ্ছে না। আগে সাংগঠনিক দুর্বলতাকে ঠিক করতে হবে। বিশেষ করে নিচুতলার সংগঠন খুব দুর্বল।”
বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ আবার বলছেন, ”নতুনদের জায়গা দেওয়া উচিত।” সৌমিত্র এও বলছেন, ”নেতৃত্ব দিশা না দেখাতে পারলে পুরো ফেল করে যাব। সাংগঠনিক রদবদলের নিশ্চই দরকার আছে। ব্যর্থদের কেউ চায় না।” গত বুধবার কলকাতায় বঙ্গ বিজেপির এই বৈঠকে ছিলেন দিলীপ ঘোষও। কিন্তু, তিনি একেবারে নীরব।

অন্যদিকে বঙ্গ বিজেপির পরবর্তী রাজ্য সভাপতি বাছতে কার্যত ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ অবস্থা পদ্ম শিবিরের। সৌজন্যে সঙ্ঘ ও দলের ‘ইচ্ছে’র পার্থক্য। বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। বিজেপির এক ব্যক্তি এক পদ রীতি অনুযায়ী সুকান্তকে ছাড়তেই হবে রাজ্য সভাপতির পদ। সূত্রের খবর, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চান, কোনও ‘লড়াকু’ মহিলা মুখকেই করা হোক রাজ্য সভাপতি।
তবে সঙ্ঘ চাইছে, তাদের লোককেই ওই পদে দেখতে। অতীতেও রাজ্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদে সঙ্ঘের লোককেই দেখা গিয়েছে। সূত্রের খবর, সম্প্রতি কেশব ভবনে তারা এই বিষয়ে বৈঠকও করেছে। তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে দিলীপ ঘোষের নাম। এ ছাড়াও বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য, বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার প্রাক্তন সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা শচীন সিংহের নাম উঠে এসেছে ওই বৈঠক থেকে। তবে সংগঠনের মধ্যে থেকে পদ সামলেছেন, এমন ব্যক্তিকেই সভাপতির পদ এত কাল দিয়ে এসেছে বিজেপি।

সূত্রের খবর, চূড়ান্ত বিবেচনার জন্য আপাতত তিনটি নাম ঘোরাফেরা করছে। আলোচনায় রয়েছে পুরুলিয়া থেকে টানা দু’বার সাংসদ হওয়া জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতোর নাম। তিনি বর্তমানে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জগন্নাথ সরকার রানাঘাট আসন থেকে দ্বিতীয় বার সংসদে গিয়েছেন। বিজেপির জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে তাঁর ব্যবধান সর্বোচ্চ। সঙ্ঘের প্রতি বিশ্বস্ত, পুরনো, নির্ভরযোগ্য ও মহিলা মুখ হিসেবে নাম রয়েছে দেবশ্রী চৌধুরীরও। প্রাক্তন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দিলীপ-জমানায় রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন। বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের মহিলা মুখের চাহিদা এবং সঙ্ঘের নিজের লোককে পদে বসানোর ইচ্ছে— এই দু’য়ের মধ্যে সেতু বন্ধন করতে পারেন দেবশ্রীই। বর্তমানে তিনি সাংসদ না থাকায় সংগঠনে বাড়তি সময় দিতে পারবেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। তবে বিজেপির এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘এটাও ঠিক, বিজেপিতে যে নাম নিয়ে সব চেয়ে বেশি আলোচনা হয়, তাঁর পদ পাওয়ার সম্ভাবনা সব চেয়ে ক্ষীণ হয়!’’ বিজেপির টার্গেট এখন ২০২৬। বিধানসভা ভোটে তারা চায় বাংলায় বিজেপির সরকার গড়তে। তবে সেটা কোন পথে। তা এখনও বুঝে উঠতে পারছে না বিজেপি’র শীর্ষ নেতৃত্ব।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #bjp, #Organization, #BJP West Bengal, #2026 Assembly Elections

আরো দেখুন