বিভ্রান্তিকর! NDA সরকারের প্রথম বাজেটের বিরুদ্ধে তোপ রাজ্যের আর্থিক উপদেষ্টা অমিত মিত্রের
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: নয়া সরকারের প্রথম বাজেটকে গদি বাঁচানোর বাজেট বলে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। এবার চলতি বছরের বাজেটকে বিভ্রান্তিকর বলে সরব হলেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা প্রধান আর্থিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র। প্রবীণ অর্থনীতিবিদের সাফ অভিযোগ, দেশের অর্থনীতিকে দিশা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্রের সরকার। কাদের জন্য এই বাজেট তৈরি হয়েছে তা জানা নেই। সাংবাদিক সম্মেলেন করে কেন্দ্রীয় বাজেটের খামতির দিক তুলে ধরেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, মুষ্টিমেয় কয়েকটি রাজ্যকে সুবিধা করে দেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর তত্ত্বগুলি বিনষ্ট করা হচ্ছে। যোজনা কমিশনের সময়েও যুক্তরাষ্ট্রীয় তত্ত্বের কিছু অবশিষ্ট ছিল। নীতি আয়োগে কিছুই নেই।
তিনি বলেন, সিএমআইই-র রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক কালের মধ্যে দেশে বেকারত্বের হার সর্বাধিক, প্রায় ৯.১৮ শতাংশ। তাঁর দাবি, দেশে বেকারত্ব বাড়ছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রটি বাজেটে বঞ্চিত থেকে গিয়েছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রেও প্রায় ১.৬ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। গোটা দেশের চেয়ে অনেক ভাল পরিস্থিতিতে রয়েছে বাংলায়। জাতীয় হারের চেয়ে রাজ্যে প্রায় তিন শতাংশ কম বেকারত্ব। বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এ বিষয়ে দেশকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আর কিছুই করেননি। ৫০০টি কোম্পানিতে কেন্দ্র বছরে কুড়ি লক্ষ যুবক-যুবতীর ইন্টার্নশিপের কথা বলেছে কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রী। যা মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়। এ’সব কোম্পানিতে এত যুবক-যুবতীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। এক বছর পরে এই যুবক-যুবতীরা কী করবেন? কোনও দিশা দেখাতে পারেনি কেন্দ্র। অগ্নিবীরদের ক্ষেত্রে যা হয়েছিল, এক্ষেত্রেও তাই-ই।
শুধু বেকারত্ব বৃদ্ধিই নয়, মোদী জমানায় চাকরীজীবী থেকে শুরু করে স্ব-নিযুক্ত, সবার গড় মাসিক আয় কমেছে। মোদী আমলে যে শহরে কাজের সুযোগ কমছে, তাও পরিসংখ্যান দিয়ে তুলে ধরেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, কেন্দ্রের রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে, ২০১২ সালের তুলনায় ১০ বছরে সাধারণ কর্মচারী বা চাকরিজীবীদের গড় মাসিক আয় ১২ হাজার ১০০ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯২৫ টাকা। ‘সেল্ফ এমপ্লয়েড’ তাঁদের গড় মাসিক আয় ৭ হাজার ১১৭ টাকা থেকে কমে ৬ হাজার ৮৪৩ টাকায় নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, দেশে এই প্রথম দেখা যাচ্ছে, শহরে কাজ না-পেয়ে যুবক-যুবতীরা গ্রামীণ এলাকায় ফিরে যাচ্ছেন। গ্রামীণ ভারতে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্তদের মজুরিও তলানিতে এসে ঠেকেছে। দেশের বেকারত্বের হার কম দেখাতে অস্থায়ী কর্মীদের এবং শুধুমাত্র বাড়ির কাজে নিযুক্ত থাকেন, এমন ব্যক্তিদেরও ধরে নেওয়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, “কর্মসংস্থানের সংখ্যা দেখাতে গিয়ে কেন্দ্র গৃহবধূ, সাময়িক নিয়োগ ও স্বনিযুক্তদেরও যুক্ত করে নিয়েছে। যা অত্যন্ত লজ্জার। কর্মসংস্থানের মানে কাজ করে মজুরি পাওয়া। গৃহবধূরা কি সেটা পান? বাজেটে কর্মসংস্থান নিয়ে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে।”
এলপিজি এবং গণবণ্টনে ২.৬৪ এবং ৩.৪৫ শতাংশ ভর্তুকি কমানো হয়েছে। রাজ্যের ন্যায্য প্রাপ্য আটকে রাখার পাশাপাশি ন্যাশনাল সোশ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম এবং অঙ্গনওয়াড়ি ক্ষেত্রে বরাদ্দ কমিয়ে রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা আরও অনেকগুণ বাড়িয়েছে বলেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি।