দেশভাগ: ঘৃণা ও শত্রুতার ৭৮ বছর
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সে ছিল সহিংস এক দেশভাগ৷ ১০ লাখের মতো মানুষ মারা গিয়েছিল তাতে, আরো কয়েক লাখ মানুষ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল নিজের জন্মস্থান৷ নানা মত ও সংস্কৃতির ভারত উপমহাদেশকে ভাগ করে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে৷ ধর্মের ভিত্তিতে, অবিশ্বাস ও অনৈক্যের যুক্তি দিয়ে জোর করে সৃষ্টি করা হয়েছিল একটি দেশ – পাকিস্তান৷
এই জন্ম যন্ত্রণা, দাঙ্গা এবং শারীরিক ও মানসিক কষ্ট কখনও লাঘব হয়নি৷ ৭৮ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে ভারত ও পাকিস্তান, কিন্তু ঘা রয়ে গেছে ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্টের মধ্যরাতের মতোই দগদগে৷
স্বাধীনতার কয়েক মাসের মধ্যেই বোঝা গিয়েছিল, কোন দিকে এগোচ্ছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক৷ কাশ্মীর নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ায় দুই দেশ৷ পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) বাঙালিরা যখন নিজেদের অধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সোচ্চার হয়, পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ শুরুতেই তাদের ‘ভারতের দালাল’ আখ্যা দেয়৷ পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয় স্বাধীনতাযুদ্ধ, ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ৷
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সমস্যাগুলোর মূল নিহিত ১৯৪৭ সালের দেশভাগে৷ তথাকথিত ‘দ্বিজাতি তত্ত্বের’ ভিত্তিতে গড়ে ওঠা দেশে এখনও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চলছে৷ পাকিস্তানজুড়ে কেন ইসলামি জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে এবং কেনই বা বিদেশ নীতি ও নিরাপত্তা নীতির ভিত্তি হিসেবে ইসলামকেই বেছে নিল, বুঝতে হলে জরুরি দেশভাগের আলোচনা৷ যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হিন্দুত্ববাদের পুনর্জাগরণের কথা বলছেন, তখন এই আলোচনা আরো জরুরি হয়ে পড়েছে৷
স্বাধীনতার ৭৪ বছর নয়, বরং একে বলা উচিত শত্রুতার ৭৪ বছর৷ দেশভাগের ইতিহাস পালটানো যাবে না, কিন্তু ঘৃণার এই দেয়ালটা ভাঙা যাবে৷ চলুন, অন্তত এই দেয়ালটা ভাঙি৷