জুনিয়র ডাক্তারদের তো পরিষেবা ও আন্দোলনে ব্যালান্স করতে হবে, বলছেন রোগীর পরিজনদের
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আশায় বুক বাঁধছে জনতা। কারণ, উপায় নেই তাঁদের। আর ডাক্তাররা? সুপ্রিম বার্তার পরও তাঁরা ধর্না মঞ্চ থেকে নড়লেন না এক ইঞ্চিও। ছন্দে ফিরতে চাওয়া পিজির নেপথ্য অবদান তাই শুধুই মানুষের। তাঁদের শরীর খারাপ যে লেগেই আছে। কতদিন আর ওষুধ খেয়ে থাকা যায়। হাসপাতালমুখী হতেই হচ্ছে। তাই বৃহস্পতিবার এসএসকেএম হাসপাতালের ওপিডি, মেডিসিন কাউন্টারের বাইরে লম্বা লাইন। সেখানেই রাস্তার উপর অ্যাম্বুলেন্সের ভিতর মুমূর্ষু বাবাকে নিয়ে বসে রয়েছেন সুমন্ত। টানা তিনদিন এলেন। ভর্তি হল না। সুমন্ত বলছেন, ‘আমিও তো বিচার চেয়ে আন্দোলনে নেমেছিলাম। অভয়ার জন্য, ডাক্তারদের পাশে হেঁটেছিলাম। এখন এই পরিণতি!’
৬৬ বছর বয়স্ক মানুষটি নাকে নল নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই ঘুমাচ্ছেন। ছেলে সুমন্ত ঘোষ বলছিলেন, ‘জটিল জন্ডিস হয়েছে। শনিবার, সোমবারের পর আবার বৃহস্পতিবার। ওপিডিতে বলছে, ভর্তি হবে না। বাবাকে বাড়িতে রাখা যাচ্ছে না। কোথাও তো ভর্তি করতেই হবে!’ যাবেন কোথায়? আগে বেসরকারি হাসপাতালে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। ‘নিঃস্ব হয়ে বসে আছি। এখন দেখি চেষ্টা করে, আগের ডাক্তারকে ধরে কোনওভাবে যদি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো যায়।’ ডোমজুড় থেকে বাবাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পিজি নিয়ে আসতে দেদার অ্যাম্বুলেন্স খরচ হচ্ছে। তার উপর সুমন্ত অফিসে ছুটি নিয়ে বসে আছেন। ‘কী করব? বাবাকে তো আর ফেলে রাখতে পারি না। আমরাও চাই দোষীদের শাস্তি হোক। চিকিত্সকরা সিজিও কমপ্লেক্স, লালবাজারে যান। এভাবে চললে তো আমরা মরে যাব’—ফোনের অপেক্ষায় বসে কথাগুলো বলছিলেন সুমন্ত। ফোন এলেই বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাবেন বাবাকে।
ইমার্জেন্সিতে তখন ৭৫ বছরের শাশুড়িকে নিয়ে নাকানিচোবানি খাচ্ছেন সন্ধ্যা প্রসাদ। বলছিলেন, ‘প্রথমে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে গেলাম। বলল, পিজিতে যান। এখানে ইমার্জেন্সিতে দেখালাম। এখন বলছে, টিকিট করে ওপিডিতে দেখান। কী করব বুঝতে পারছি না।’ ভবানীপুরের ওই বৃদ্ধা তখন হাসপাতাল চত্বরেই বমি করে চলেছেন। বন্ধ ছিল কার্ডিওলজি ইমার্জেন্সিও। সেখানে ইসিজির তারিখও মিলছে না। মথুরাপুরের এক রোগীর কথায়, ‘ওপিডিতে ডাক্তার দেখল। পরীক্ষা করতে বলল। তাই তারিখ নিতে এসেছিলাম। কিন্তু আজকে দিল না। আবার তারিখ নিতে আসতে হবে। তারপর পরীক্ষার জন্য আর একদিন।’ ওপিডিতে চিকিত্সকের সংখ্যা কম। চাপ সামলাচ্ছেন ৩-৪ জন ডাক্তার। কার্ডিওলজি ওপিডিতে ঘণ্টা খানিক দাঁড়িয়ে থাকার পর ক্ষোভ উগরে দিলেন বেহালার স্বর্ণালী বন্দ্যোপাধ্যায়। বলছিলেন, ‘পিজিতে ভালো পরিষেবা পাই। কিন্তু এখন একটা ওষুধ লেখাতে এসে এতক্ষণ দাঁড়াতে হচ্ছে। জুনিয়রদের তো পরিষেবা-আন্দোলনে ব্যালান্স করতে হবে।’