কর্মবিরতির প্রথম ১৫ দিনেই চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত অন্তত ৬ লক্ষ মানুষ, জনসমর্থন হারাচ্ছে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন?
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ৯ আগস্ট থেকে জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি শুরু করেন। প্রথমে তাঁদের সমর্থন করছিলেন রাজ্যের অসংখ্য মানুষ। ভোগান্তি সত্ত্বেও এ লড়াইয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে ছিলেন রোগীর আত্মীয়রাও। কর্মবিরতি ২ সপ্তাহও পার করতেই অসহনীয় হয়ে উঠল পরিস্থিতি। হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা না-পাওয়া, হতদরিদ্র রোগীদের মৃত্যু, গরিব মানুষের কান্নায় উধাও জনসমর্থন। রাজ্য, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের অনুরোধকে বিশেষ পাত্তা না-দিয়ে ১৭ দিনে পেরোলো কর্মবিরতি। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চিকিৎসা করাতে পারলেন না কতজন? স্বাস্থ্যভবনের হিসাব, কর্মবিরতির প্রথম ১৫ দিনেই চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অন্তত ৬ লক্ষ মানুষ।( পরিসংখ্যান ২৩ আগস্ট পর্যন্ত)
গত ক’দিনে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন রোগীরা, তাঁদের পরিজনরা। টালা থেকে টালিগঞ্জ, বসিরহাট থেকে বিধাননগর, চিত্র মোটামুটি একই। শুধু হাসপাতালের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরছেন রোগীরা। ভর্তি করা যাচ্ছে না রোগীদের।
রাজ্যের ২৪টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে প্রতি ১৫ দিনে পরিষেবা পান অন্তত ১০ লক্ষ রোগী। কর্মবিরতির প্রথম পনেরো দিনে আউটডোর পরিষেবা নিয়েছেন অর্ধেকের কম চার লক্ষ মানুষ। পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন প্রায় ছ’লক্ষ রোগী। বছরের যেকোনও সাধারণ দিনে গড়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মানুষ এই সব মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তি হন। এখন কমে হয়েছে ৪ হাজার। ৯-২৩ আগস্ট ভর্তির সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন সাড়ে ৩৭ হাজার মানুষ। আন্দোলনের জেরে সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির ইমার্জেন্সিতেও ২৫ হাজার মানুষ কম এসেছেন। আড়াই হাজারেরও বেশি অপারেশন কম হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৫৭ হাজার রোগীর রোগ ও রক্তপরীক্ষা হয় রাজ্যের শীর্ষস্তরের সরকারি হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজগুলিতে। ১৫ দিনে টেস্টের সুবিধা পান ৮ লক্ষ ৫৫ হাজার মানুষ। কর্মবিরতির জেরে তাও অর্ধেক কমে দাঁড়িয়েছে ৪ লক্ষ ৫ হাজারে।
স্বাস্থ্যদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলা, মহকুমা, গ্রামীণ, স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে রোজ আউটডোরে ডাক্তার দেখান এক লক্ষ মানুষ। আন্দোলন সত্ত্বেও এইসব হাসপাতালে ইনডোর, আউটডোরে রোগী কমেছে নামমাত্র। করোনাকালে খুব বড় বিপদ আপদ না হলে কলকাতার হাসপাতালে আসতে চাইতেন না মানুষ। এবারেও কর্মবিরতির খবরে তেমনটা দেখা যাচ্ছে। ভরসা হয়ে দাঁড়াচ্ছে স্থানীয় হাসপাতাল বা নার্সিংহোমই।
মানুষের ভোগান্তি সত্ত্বেও কর্মবিরতি চলবে, সোমবার জানিয়েছেন আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র ডাঃ অনিকেত মাহাত।