রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

আরজি কর কাণ্ডে ধর্ষকের হাতেই খুন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, মনে করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ

September 2, 2024 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দিল্লি এইমসের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের প্রথম এমডি ও পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা, মেডিকো লিগাল এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ডাঃ তীর্থ দাস। যাঁর হাতে ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, গোধরা, নিঠারি গণহত্যা, আরুষি তলোয়ারের মতো হাইপ্রোফাইল মামলার ময়নাতদন্তের ভার ছিল। আরজি কর কাণ্ড নিয়ে বাংলা দৈনিককে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি যা বললেন-

প্রশ্ন: আর জি কর কাণ্ডের ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল সম্পর্কে আপনার অভিমত?

উ: যদি এটাই ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্ট হয়, নিশ্চিতভাবে ধর্ষণ-খুন হয়েছে। তারপরও কিনারায় এত সময় লাগছে কেন? কোথাও কি ফাঁক রয়েছে?

প্রশ্ন: ময়নাতদন্ত রিপোর্টে অসঙ্গতি দেখছেন? রি-পোস্টমর্টেম করার দরকার ছিল?

উ: মনে হয় না। তিনজন ময়নাতদন্ত করেছেন। শুক্রাণুর পাশাপাশি নখের নমুনা নেওয়া হয়েছে কি? শরীরে যে ধরনের আঘাতের চিহ্নের উল্লেখ দেখলাম, নিশ্চয়ই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তরুণী। ওঁর নখে ধর্ষকের চামড়ার অংশ থাকতে পারে। সম্ভাব্য ধর্ষকের ডিএনএ’র সঙ্গে সেইসব নমুনা মেলালেই তো স্পষ্ট হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে তদন্ত এগনোয় সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

প্রশ্ন: আর কী কী উপায় আছে, যাতে বোঝা সম্ভব, ধর্ষণ হয়েছে নাকি গণধর্ষণ?

উ: একজনের সিমেন পাওয়া গেলে ধর্ষক একাধিক হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নগণ্য। বাকিটা তথ্য-প্রমাণের উপর নির্ভর করছে। ধরে নিলাম, দ্বিতীয় কেউ ছিল। সে মারাত্মক সাবধানতা অবলম্বনও করেছিল। তাও কিছু প্রমাণ থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পরবর্তী কাজটা তদন্তকারীদের।

প্রশ্ন: আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে?

উ: রিপোর্ট পড়ে দেখলাম, প্রচুর ক্ষতচিহ্ন আছে। এক্ষেত্রে দু’টি সম্ভাবনা প্রবল। প্রথমত, ধর্ষক হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে গলা টিপে ধরলে আক্রান্ত সাময়িকভাবে জ্ঞান হারাতে পারেন। তাঁকে যদি অবশ বা আচ্ছন্ন করার মতো কিছু খাওয়ানো হয়, তাহলেও সেটা সম্ভব। এই দুই ধরনের পরিস্থিতিতে ভিকটিম অসহায়। তখন ধর্ষণ সম্ভব। এমনকী খুনও অসম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে ধর্ষকই খুন করেছে, বলা যেতেই পারে। দ্বিতীয়ত, ঘটনায় আরও কোনও ব্যক্তির উপস্থিতি। ভিকটিম পূর্ণবয়স্ক মহিলা। হয়তো কেউ ধৃতকে সাহায্য করেছে। বা ধর্ষণও করেছে। প্রমাণ রাখেনি। মহিলাদের পায়ের হ্যামস্ট্রিং মাসল প্রচণ্ড শক্তিশালী। সম্ভ্রম রক্ষায় তাঁরা মরিয়া হলে দুটো পা জুড়ে দেন। একজনের পক্ষে সেই অবস্থায় ধর্ষণ প্রায় অসম্ভব। এটা ঈশ্বরদত্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা। হয় এই প্রতিরোধ করার মতো অবস্থায় তিনি ছিলেন না। অথবা ধর্ষকের সঙ্গে কেউ ছিল।

প্রশ্ন: ওই চিকিৎসক প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ডিউটিতে ছিলেন। সেই ক্লান্তিতে…

উ: যতই তন্দ্রাচ্ছন্ন হোন, যৌন নির্যাতন করতে গেলেই তিনি সজাগ হবেন। বাধা দেবেন। যদি না প্রথমেই কেউ তাঁকে গলা টিপে অজ্ঞান বা অবশ করে দেয়।

প্রশ্ন: ধর্ষণ-খুন একজনই করেছে? প্রতিরোধ করলে তো কামড়ের দাগ থাকবে?

উ: ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেখে আমার তাই মনে হয়। গলাই যদি টিপে ধরে, কামড়ের মতো প্রতিরোধ আসবে কীভাবে? সিংহভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ধর্ষক সাক্ষী রাখতে চায় না। এক্ষেত্রে যদিও বা বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে শেষে ফের গলা টিপে মেরে ফেলতেও পারে।

প্রশ্ন: নিজের করা ময়নাতদন্তের কোনও ঘটনা মনে পড়ছে?

উ: এই ধরনের ঘটনার ময়নাতদন্ত এত করেছি… দিল্লিতে একবার এক নার্সের ক্ষেত্রে প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। ডিউটি শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এমন সময় ঘটনাটি হয়। একজনই ছিল। ধরাও পড়ে।

প্রশ্ন: ধর্ষক মদ্যপ অবস্থায় ছিল। মদ্যপ অবস্থায় এই কাজ করা সম্ভব?

উ: আলবাৎ। মদ খাওয়ায় মস্তিষ্কের বারণটাই চলে যায়। লিপ্সা আরও বেড়ে যায়।

প্রশ্ন: ময়নাতদন্তের রিপোর্ট যা বলছে, তাতে সমাধান কি খুব সময়সাপেক্ষ?

উ: মনে তো হয় না।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#RG Kar case, #forensic expert, #rapist

আরো দেখুন