চওড়া হচ্ছে চিড়! এলিট না গরিব, কোথায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দিকে দিকে আন্দোলন। শনি-রবিবার হলেই ‘অরাজনৈতিক’ আন্দোলনের ঢেউ ধাক্কা দিচ্ছে শহরে। কালঘাম ছোটে আম জনতার। রাস্তাজুড়ে নানান কর্মসূচি। ‘মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে কি আন্দোলনের নামে ফ্যাশন প্যারেড?’ এমনই মন্তব্য করতে শুরু করেছেন মানুষজন। ‘ছবিগুলো পাঠিয়ে দিস’-র মতো বার্তা আসছে মিছিল শেষে। আন্দোলনকারীদের মধ্যে প্রশ্ন জাগছে, ‘মানুষ তো সরে যাচ্ছে!’ কেউ বলা শুরু করেছেন, ‘কোন্নগরের যে ছেলেটা মারা গেল, আমরা কি তা চেয়েছিলাম?’ উৎসব বয়কটের আবহে উঠছে বিরুদ্ধমত। বেলুনওয়ালা-ফুচকাওয়ালা-ঢাকিওয়ালাদের কথা মনে করাচ্ছে কেউ কেউ।
আন্দোলনে ফাটল আরও চওড়া হচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক গ্রুপে সারাক্ষণ চলছে আন্দোলনের আলোচনা। আন্দোলনে রাজনীতির রং ও মানবিকতার বিসর্জন ভাবিয়ে তুলছে রাজ্যের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের। বিরোধিতায় দাঁড়ানো সাধারণ মানুষ বলছেন, ‘আবার লাল-গেরুয়া বলে দাগিয়ে দেবেন না প্লিজ!’ আন্দোলনে না নামলে মানুষ একঘরে হয়ে যাচ্ছেন! অরাজনৈতিক আন্দোলন কেমন যেন দামি ব্র্যান্ডের লোগো বা নামী ডিজাইনারের হাতে তৈরি পোশাক দেখানোর খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রান্তিক শ্রেণির মানুষরা কোথায়? মাস খানেক বাদে গৃহসহায়িকা, রিকশচালকদের সংগঠিত করে পথে নামানো হয়েছে প্রান্তিক মানুষদের প্রতিনিধিত্ব দেখাতে। প্রান্তিক মানুষদেরই বক্তব্য, ‘ওঁরা তো সব সকালে উঠে অফিসে যাচ্ছে। আর আমাদের? সারাদিন পরিশ্রম করে রাতে বাড়ি ফিরতেই ঘামে ভিজতে হচ্ছে।’
কোন্নগরের ২৭ বছরের যুবকের মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠছে। পুত্রহারা মায়ের কান্না থামছে না। রাজনীতির ছ্যাঁকা গায়ে না-লাগা আন্দোলনকারীরা কেঁপে গিয়েছেন কান্নায়। অনেকেই বলা শুরু করেছেন, ‘এই ঘটনা তো আমাদের সঙ্গেও ঘটতে পারে। তখন কী হবে?’ তাঁদের কাউকে ট্রোল হতে হচ্ছে, কাউকে শুনতে হচ্ছে ডাক্তারদের যুক্তি। আশঙ্কা নিয়েই চুপ করে যাচ্ছেন একাংশের আন্দোলনকারীরা। কেউ কেউ বলছেন, আন্দোলন কোনও মায়ের চোখের কান্না দেখার জন্য নয়। শহরের সরকারি হাসপাতালে আসা কৃষক পরিবারের মানুষগুলো প্রতিনিয়ত চোখের জল ফেলে রোগী নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, শহরের বাবুরা কি আমাদের খবর রাখেন?