‘এক দেশ এক ভোট’ কার্যকর করতে অতিতৎপর মোদী সরকার, প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মোদী সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হল মঙ্গলবার। আর বুধবার নরেন্দ্র মোদী সরকার ‘এক দেশ এক ভোট’ (ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন) নীতি কার্যকরের পথে আর এক ধাপ অগ্রসর হল। এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাশ হয়েছে ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি কার্যকরের লক্ষ্যে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ। এর ফলে সংসদের অধিবেশনে এই নীতি কার্যকর করার লক্ষ্যে কেন্দ্র বিল পাশে সক্রিয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
লোকসভা ভোটের আগেই গত ১৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে গিয়ে এক সঙ্গে লোকসভা এবং সবক’টি বিধানসভার নির্বাচন করানোর সুপারিশ করে আট খণ্ডে বিভক্ত ১৮ হাজার পাতার রিপোর্টটি জমা দিয়েছিল কোবিন্দ কমিটি। সেখানে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ কমিটির অন্য সদস্যেরা।
আরও পড়ুন: চলতি মেয়াদেই ‘এক দেশ, এক ভোট’ কার্যকরের পথে BJP?
কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম-সহ বিরোধী দলগুলি গোড়া থেকেই ‘এক দেশ এক ভোট’ পদ্ধতির সমালোচনায় মুখর। তাদের মতে, এই নীতি নিয়ে মোদী সরকার ঘুরপথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ধাঁচের ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক ভাবনার পরিপন্থী বলেও বিরোধী নেতৃত্বের অভিযোগ।
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইটারে বলেছেন, “এক দেশ, এক নির্বাচন অগণতান্ত্রিক এবং বিজেপির আরেকটি গিমিক মাত্র। হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচনের সঙ্গে কেন মহারাষ্ট্রে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হল না? কেন মহারাষ্ট্র সরকার, জুন মাসের বাজেটে ‘লড়কি বহিন’ প্রকল্প ঘোষণা করল। যার প্রথম কিস্তি আগস্ট মাসে মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছেছে। দ্বিতীয় কিস্তি অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। আপনি একসঙ্গে তিনটি রাজ্য ভোট করাতে পারলেন না, আর আপনিই এক হওয়ার কথা বলছেন!’’
আর এটাও বলুন, বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভার মেয়াদ কমানো বা বাড়ানো-সহ সংবিধানে কতগুলি সংশোধন আনবেন! ক্লাসিক মোদী-শাহ জুমলা”
উল্লেখ্য, এক দেশ এক ভোট’ সংক্রান্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সচিব নীতেন চন্দ্রকে ১১ জানুয়ারি চিঠি লিখেছিলেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, এক দেশ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে। সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক কিংবা ঐতিহাসিক পটভূমিতে একদেশের অর্থ আমরা বুঝি। কিন্তু ভারতের সংবিধানের শর্ত অনুযায়ী এর অর্থ আমাদের বোধগম্য নয়।
ওই চিঠিতে তৃণমূল নেত্রীর প্রশ্ন ছিল, সংবিধানে কি এক দেশ এক এক সরকারের নীতি অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে? তিনি লিখেছেন, ‘ভারত আসলে একটা যুক্তরাষ্ট্র কোথাও এক দেশ এক সরকারের কথা বলা নেই। এই মৌলিক বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে এক দেশ এক ভোটের কথা ভাবা যায় না।’
মমতার আরও প্রশ্ন ছিল, ‘লোকসভার সঙ্গে সব রাজ্যের নির্বাচন করবেন কী করে? ১৯৫২ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের সময় কিছুদিন তা হয়। কিন্তু রাজ্য ও জাতীয়স্তরে নানা পালাবদলের কারণে সেই তালমিল ভেঙে গিয়েছে।’ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, যে সব রাজ্যে মানুষ পাঁচ বছরের জন্য কোনও সরকারকে নির্বাচিত করেছে, তা হঠাৎ করে ভেঙে দেওয়া অনৈতিক হবে। তা হয় না কি!’