৪৫০ বছর আগে কীভাবে শুরু হয়েছিল বারাসতের দক্ষিণপাড়ার শিব কুঠিরের দুর্গাপুজো?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ৪৫০ বছর আগে বারাসতের দক্ষিণপাড়ার শিব কুঠিরের দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল। কথিত আছে, রানি যোধাবাঈ শিবের উপাসক শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়কে দুর্গার পুজো শুরুর অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর অনুরোধেই পুজো শুরু করেন শৈব শঙ্কর। তাই এ পুজো ‘শিবের কোঠার দুর্গাপুজো’ নামে পরিচিত। গত ৪৫০ বছর ধরে কাঠামোর কোনও পরিবর্তন হয়নি। জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজোর পর প্রতিমা গড়া শুরু হয়। মহালয়ার আগের দিন ঠাকুরদালানে প্রবেশ করেন দেবী। দেবীপক্ষের সূচনায় পুজো শুরু হয়।
দশমীতে উমা পান্তা ভাত ও কচুশাক খেয়ে ফেরেন। অষ্টমীতে প্রবীণ মহিলারা দুর্গার সামনে বসে ধুনো জ্বালান। তখন পরিবারের সদস্যরা এমনকি এলাকার বহু মানুষ তাঁদের কোলে গিয়ে বসেন। তাঁদের বিশ্বাস, কোলে বসলে গোটা বছর শরীর সুস্থ থাকবে। সম্রাট আকবর বারো-ভুঁইয়াদের মধ্যে এগারো জনকে বশে এনেছিলেন। তবে যশোরাধিপতি প্রতাপাদিত্য ছিলেন নির্ভীক। প্রতাপাদিত্যের প্রধান সেনাপতি ছিলেন সর্দার শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। সম্রাটের উদ্দেশ্য ছিল প্রতাপাদিত্যকে হারানো। কৌশলে প্রতাপাদিত্য ও শঙ্করকে বন্দি করে দিল্লি নিয়ে যান তিনি। সঙ্গে নিয়ে যান যশোরেশ্বরী কালীমূর্তি। আকবরের মৃত্যু হয়। বন্দি অবস্থায় মারা যান প্রতাপাদিত্য। জাহাঙ্গিরের নির্দেশে শঙ্করের আমৃত্যু কারাবাসের আদেশ।
পিতৃতর্পণ কাল চলছিল। বন্দি শঙ্কর সম্রাটের কাছে তর্পণ করার আর্জি জানান। আবেদন নাকচ করেন জাহাঙ্গির। শঙ্কর কারাগারে আমরণ অনশন শুরু করেন। যোধাবাঈ হস্তক্ষেপ করেন। শঙ্করের আবেদন অনুমোদনের নির্দেশ দেন। সেনা প্রহরায় যমুনার তীরে তর্পণ শুরু করেন শঙ্কর। মন্ত্রোচ্চারণ করছিলেন। গম্ভীর গলার সে মন্ত্রের আকর্ষণে বহু মানুষের ভিড় জমে যায় নদীতীরে। ভিড়ে মিশে ছিলেন বোরখা পরিহিত যোধাবাঈ পর্যন্ত। সেই রাতে যোধাবাঈ স্বপ্নে দেখেন, তিনি দুর্গাপুজো করছেন। এরপর কারাগারে গিয়ে শঙ্করকে দুর্গাপুজো করার অনুরোধ জানান স্বয়ং যোধাবাঈ। শিবের উপাসক শঙ্কর প্রথমে প্রস্তাবে রাজি হননি। পরে রাজি হয়ে পুজো করলেন পিতৃ ভিটে বারাসতে। শিবের উপাসক হয়েও দুর্গাপুজো করেছিলেন বলে এই পুজো ‘শিবের কোঠার দুর্গাপুজো’ নামে পরিচিত।
অষ্টমীতে পরিবার ও পড়শিদের নিরোগ কামনায় ধুনো জ্বালানো হয়। দশমীতে বিসর্জনের আগে উমাকে অঞ্জলি দেন বাড়ির ও পাড়ার বিধবা মহিলারা। সিঁদুর দানও করেন তাঁরা। সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। বিসর্জনের পর হয় সত্যনারায়ণ পুজো।