সৃষ্টির উৎসব করম পরব
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: গ্রাম বাংলার প্রচলিত পার্বণ হলো করম পরব বা করম পুজো। করম প্রধানত হল সৃষ্টির উৎসব। কর্ম শব্দ থেকে করমের উৎপত্তি। ঝাড়খণ্ডের কিছু জায়গায় এই উৎসব কর্মা নামেও পরিচিত। আরও ভালো করে দেখলে বোঝা যায় এই পরবের মূল আচার যে জাওয়া পাতা, তার মধ্যেও লুকিয়ে আছে এই সৃজনশীলতার ইঙ্গিত।
মানুষ সারা বছর এই উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। ঠিক যেমন রাখিবন্ধনের দিন বোনেরা তাদের ভাইয়ের হাতে রাখি বেঁধে দীর্ঘায়ু কামনা করেন, ঠিক একইভাবে করমও ভাই-বোনের সম্পর্ককে মজবুত করে। এই দিনে, বোনেরা সারাদিন উপবাস করে এবং ভগবান কর্মের পূজা করেন এবং তাঁর কাছে তাঁদের ভাইয়ের দীর্ঘায়ু এবং সুখ ও সমৃদ্ধির আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
প্রতি বছর আদিবাসী, সাঁওতাল, কুড়মি, ভূমিজ অধ্যুষিত জনপদে ভাদ্র মাসের শুক্লা একাদশীতে পালিত হয় করম পরব বা করম পুজো। আদিবাসী মানুষজন সারা বছর এই উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। ইতিমধ্যে ধান রোপণ সারা হয়েছে। ফসল কেমন হবে, তা নিয়ে উৎকণ্ঠা কম নয়। করম পুজোয় ভালো ফসলের কামনা করেন আদিবাসীরা।
পুজো শেষ হওয়ার পরে মানুষ ঢোল, মন্দার ও নাগারার তালে তালে নাচতে থাকেন। কখনও কখনও আবার নাচতে নাচতে এলাকা পরিভ্রমণও করেন তাঁরা। ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি সকলের বিনোদনের একটি মাধ্যমও এই করম পুজো। পুরুষরা সারা রাত ধরে নাচ-গানে মেতে ওঠেন। তবে ভাদ্র একাদশীর ন’দিন আগে থেকেই করম পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। পুজো উপলক্ষ্যে নদীর বালি ঝুড়িতে রাখা হয়। এরপর তা সাজিয়ে সাত ধরনের শস্য বপন করা হয়। পুজোর দিন সেই শস্য অঙ্কুরিত হয়। একে বলা হয় ‘জাভা’ ফুল। পাতা ও ফুল দিয়ে সাজানো হয় পুজোর স্থানগুলি। ভক্তরা স্নান সেরে নতুন পোশাক পরে অর্চনায় যোগ দেন।