শিশু পর্নোগ্রাফি দেখা ও ডাউনলোড করা পকসো ধারায় অপরাধ, ঐতিহাসিক রায় শীর্ষ আদালতের
সদ্যই মাদ্রাজ হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল, ব্যক্তিগত পরিসরে শিশু পর্নোগ্রাফি দেখা ও ডাউনলোড অপরাধ নয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শীর্ষ আদালতে যায়। সোমবার রায় ঘোষণা করেছে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বেঞ্চ। মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায়কে গুরুতর ত্রুটিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে খারিজ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। পকসো আইনের শিশু পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত ১৫ নম্বর ধারার কথা উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা।
শিশু পর্নোগ্রাফি ডাউনলোড তো বটেই, এমনকী কেউ শিশু পর্ন দেখলেও তা পকসো ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই রায়কে মাইলফলক বলে মনে করছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল। শিশু পর্নোগ্রাফি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ২০০ পাতার রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, “শিশুদের যৌন নিগ্রহ গুরুতর সমস্যা। এর শিকড় ছড়িয়ে অনেক গভীরে। এই ইস্যুতে গোটা বিশ্ব আজ জর্জরিত। ভারতেও এটি চূড়ান্ত উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
আরও পড়ুন: প্রতারণার নয়া ফাঁদ! CBI-র নামে ভয় দেখিয়ে ‘ডিজিটাল স্ক্যাম’
প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, “সমাজে ছড়িয়ে থাকা চাইল্ড পর্নোগ্রাফির মতো ভয়াবহ উপাদান শিশুদের অস্তিত্ব ও শৈশবকে সঙ্কটে ফেলে দিচ্ছে। প্রতিদিন তাদের মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকার ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে।”
শীর্ষ আদালতের উপলব্ধি, এহেন পরিস্থিতি থেকে সমাজকে বের করে আনতে সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা। যথাযথ সেক্স এডুকেশন প্রোগ্রাম প্রয়োজন। একদিকে যেমন শিশু ও কিশোর সমাজ সতর্ক হবে, তেমনই অপরাধ বোধ সমাজকে শুদ্ধ করবে। এ সংক্রান্ত পাঠ্যসূচিতে শিশু পর্নোগ্রাফির আইনগত এবং নৈতিক প্রভাব সম্পর্কে খুঁটিনাটি অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছে আদালত। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ব্যাপক আকারে প্রচারেও জোর দেওয়া হয়েছে। স্কুলগুলিকে বাড়তি ভূমিকা নিতে বলেছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
ভারত সরকারকে শীর্ষ আদালতের পরামর্শ, পকসো আইনে ‘শিশু পর্নোগ্রাফি’র পরিবর্তে ‘চাইল্ড সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়েটিভ অ্যান্ড অ্যাবিউস মেটেরিয়াল’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করা উচিত। কেন্দ্র অর্ডিন্যান্স জারি করে এই সংশোধন কার্যকর করতে পারে বলে জানিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। এবার থেকে আদালতের কোনও নির্দেশ বা রায়ে ‘শিশু পর্নোগ্রাফি’ শব্দ ব্যবহার না-করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। ‘শিশুদের যৌন নির্যাতন বা নিগ্রহ’ ব্যবহারের ক্ষেত্রেই জোর দিয়েছে আদালত।