পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

বিষ্ণুপুরে শুরু হয়ে গেল হাজার বছরের পুরোনো মল্ল রাজাদের দুর্গাপুজো

September 28, 2024 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বৃহস্পতিবার, তোপধ্বনির মধ্যে দিয়ে বিষ্ণুপুরে মল্ল রাজবাড়িতে শুরু হল পুজো। রাজবাড়ির পুজো এবারে ১০২৮ বছরে পড়ল। পটে আঁকা দেবী বড় ঠাকুরানির আগমনের সঙ্গে সঙ্গে রাজবাড়ির পুজো শুরু হয়। মায়ের আগমন বার্তা জানান দিতে তিনটি পর্যায়ে মোট ৯টি তোপ দাগা হয়।

মল্লদের প্রথম রাজধানী ছিল জয়পুরের পদ্যুঘ্নগড়। ২৯ তম মল্লরাজা জগত মল্ল বিষ্ণুপুরে শিকারে গিয়ে গাছের তলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। শিকারযাত্রায় তাঁর সঙ্গে থাকত পোষা বাজপাখি। বিশ্রামের সময় আকাশে বক দেখতে পেয়ে বাজপাখি উড়ে গিয়ে সেটিকে ধরার চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে বাজপাখিটি মাটিতে পড়ে যায়। ওই রাতে মা মৃণ্ময়ী রাজাকে স্বপ্নাদেশ দেন, তিনি সে অঞ্চলের মাটিতে রয়েছেন। তাঁকে যেন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজা দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন। গঙ্গামাটির সেই বিগ্রহ আজও অক্ষত। সেই মূর্তিকেই পুজো করা হয়। স্বপ্নাদেশ পেলে মাঝে মাঝে দেবীর অঙ্গরাগ হয়। দেবীর মূর্তিতে নতুন রং করা হয়।

পুজো তিথি নক্ষত্র মেনে হয়। দেবী তিনটি রূপে পূজিতা হন—বড়ঠাকুরানি মা কালী, মেজো ঠাকুরানি সরস্বতী রূপে ও ছোট ঠাকুরানি লক্ষ্মীরূপে। বৃহস্পতিবার বড়ো ঠাকুরানি মূল মৃন্ময়ী মন্দিরে প্রবেশ করলেন। মহালায়ার পরদিন মেজো ঠাকুরানি একইভাবে পুজোর পর মন্দিরে প্রবেশ করবেন। এবং ষষ্ঠীতে দেবী ছোট ঠাকুরানি প্রবেশ করবেন। নবমীর রাতে অন্ধকারের মধ্যে খচ্চরবাহিনীর পুজো হয়।

মল্ল রাজবাড়ির পুজো হয় নিজস্ব পদ্ধতিতে। সেই সময়ের হাতে লেখা পুঁথি পাঠ করেই করা হয় পুজো। প্রথা অনুযায়ী, জিতাষ্টমীর দিন বিকেলে বিল্লবরণ অনুষ্ঠান হয়। ওইদিন দেবী সারারাত বেলগাছে ছিলেন। পরদিন সকালে গোপালসায়রে স্নান করানোর পর দেবী বড়ঠাকুরানিকে মন্ত্রের মাধ্যমে শুদ্ধাচারের পর মৃন্ময়ী মন্দিরে প্রবেশ করানো হয়।

প্রাচীনকালে ঘট ও পটকেই পুজো হত। তৎকালীন মল্লরাজাদের সেনাবাহিনীর মধ্যে একজন ছবি আঁকতে খুব পছন্দ করতেন। তাঁর আঁকা ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে রাজপরিবারের পুজোয় তাঁকে পট আঁকার দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে তাঁর বংশধররা একইভাবে রাজবাড়ির পুজোয় পটের দেবী আঁকেন। প্রতিমা ছাড়াও রাজবাড়ির পুজোর অন্যতম আকর্ষণ পটে আঁকা বড়ো, মেজো ও ছোট ঠাকুরানির পুজো। অষ্টমীর সন্ধি পুজোয় তোপধ্বনি দেখতে স্থানীয় মূর্চার পাহাড়ে হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় জমান। দশমীর দিন ঘট বিসর্জনের পর নীলকন্ঠ পাখি উড়িয়ে ও দইয়ের মধ্যে চ্যাং মাছ ছেড়ে রাজবাড়ির পুজো শেষ হয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Bishnupur, #Durga Puja 2024, #Malla Rajbari

আরো দেখুন