পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

রানাঘাটের বুড়োমার পুজোর বয়স ৭৬২ বছর

October 2, 2024 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: শর্মা বাড়ির ‘বুড়োমা’র পুজোর শুরু ঠিক কবে, তার লিখিত কোনও দলিল-দস্তাবেজ নেই। ঐতিহাসিকরা বলেন, রানাঘাটের এটাই প্রাচীনতম পুজো। শর্মা পরিবারেরও দাবি, বুড়োমার পুজোর বয়স প্রায় ৭৬২ বছর। ১২৬২ সালে চাঁচোল থেকে তৎকালীন ব্রহ্মডাঙ্গায় এসে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন রামকুমার চক্রবর্তী। পরিবার জীবনে নিঃসন্তান ছিলেন তিনি। কেবলমাত্র এক পালিতা কন্যা ছিল তাঁর। পরবর্তীকালে ওই পালিতা কন্যার দুই মেয়ে হয়। তাঁদেরই এক মেয়ের বর্তমান প্রজন্ম শর্মা বাড়ির সদস্যরা। যেহেতু অত্যন্ত প্রাচীন এই দেবী দুর্গার আরাধনা, সেইহেতু সূচনাকাল অনুযায়ী মূর্তি পূজোর প্রচলন ছিল না। সে সময় পুজো হতো ঘটে কিংবা পটে।

পরে ধীরে ধীরে মূর্তি পুজোর প্রচলন হয়। অন্য সব জায়গায় জমিদার বাড়ি আদলে ঠাকুরদালান, সিংহদুয়ার অথবা প্রকাণ্ড অট্টালিকা থাকলেও শর্মাদের বাড়ি সম্পূর্ণব্যতিক্রমী। প্রাচীনতম পুজো হলেও প্রকাণ্ড অট্টালিকা তাঁদের কোনওদিনই ছিল না। বরং সে যুগে আর্থিকভাবে দুর্বলই ছিলেন তাঁরা। বর্তমান প্রজন্ম আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতার মুখ দেখার পর তৈরি হয়েছে রাজকীয় আদলে ঠাকুরদালান।

বর্তমান প্রজন্ম সৌরভ শর্মা চৌধুরী বলেন, ‘পুজোর প্রচলনকাল থেকে নিয়ম ছিল ভিক্ষে করেই পুজোর সংস্থান করতে হবে। দীর্ঘকাল ধরেই আমরা সেই রীতি বজায় রেখেছি। তবে পুরো সংস্থান এখন ভিক্ষে করে হয় না। প্রথমে পাঁচটি বাড়িতে ভিক্ষে করে যা জোগাড় হয় সেটিই পুজোর প্রথম অর্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। পূর্বপুরুষদের কাছে শুনেছি, মায়ের চিন্ময়ী রূপ দেখে অভিভূত হয়ে যান রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। তখন তিনি নাকি প্রতিমার একটি আঙুল কেটে দেখতে চান সত্যিই মা এখানে বিরাজমান কি না। শোনা যায়, তখন নাকি মাতৃ মূর্তির সেই কাটা আঙুল দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। যা দেখে কৃষ্ণচন্দ্র মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন এবং তাঁর অগাধ বিশ্বাস জন্মায় বুড়ো মায়ের প্রতি।’

কিন্তু নাম কেন বুড়ো মা? সৌরভবাবু বলেন, ‘এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর আমাদের পরিবারের কারও জানা নেই। তবে আমাদের বর্তমান যে পদবী শর্মা চৌধুরী তা উপাধিরূপে দিয়েছিলেন খোদ রাজা কৃষ্ণচন্দ্রই। আদতে আমাদের পদবী মুখোপাধ্যায় ছিল বলে শুনেছি।’ শর্মাবাড়ির ব্যতিক্রমী কিছু নিয়মনীতির মধ্যে অন্যতম হল কাদামাটির খেলা। নবমীতে শর্মা বাড়ির ঠাকুরদালান ছাড়াও রানাঘাটের ঘোষ বাড়ি, পালবাড়ি, কাঁসারি বাড়ি এবং একটি বারোয়ারি পুজোয় কাদামাটি খেলতে যান পরিবারের বর্তমান প্রজন্মরা। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, রানাঘাটে প্রথম পাটে ওঠেন বুড়ো মা। সেটা হয় চতুর্থীর দিন। তারপর সর্বত্র ঠাকুর পাটে তোলা হয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#durga puja, #Durga Puja 2024, #Buroma Puja, #ranaghat

আরো দেখুন