বাহুবলী লাঠিয়ালরা জলদস্যুদের পরাস্ত করে ধনসম্পদ বাঁচিয়েছিলেন, সেই সম্পদ দিয়ে শুরু হয় পুজো
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: পাত্রসায়রের হদলনারায়ণপুরে মন্দির ও পুজোর রয়েছে এক ইতিহাস। একসময় জমিদার বাড়ির দুই বাহুবলী লাঠিয়াল দামু ও কামু। জমিদারবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় তিনশো বছর আগে মণ্ডল পরিবারের পূর্ব পুরুষ বেচারাম মণ্ডল এলাকায় চাষ হওয়া নীল কলকাতায় বিক্রি করতে যেতেন। একবার ব্যবসায় প্রচুর মুনাফা হয়েছিল। প্রচুর সম্পদ নিয়ে তিনি গঙ্গা দিয়ে বজরায় করে ফিরছিলেন। সেই সময় তিনি জলদস্যুদের আক্রমণের মুখে পড়েন। দস্যুদের কিছু ধনসম্পদ দিয়ে সে যাত্রায় রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, বেচারামবাবুর সঙ্গে থাকা দুই বলবান লাঠিয়াল দামু ও কামু সর্বশক্তি দিয়ে দস্যুদের পরাস্ত করেন। ফিরে এসে লভ্যাংশ দিয়ে বেচারামবাবু মন্দির নির্মাণ করেন। তখন থেকেই পুজো শুরু হয়। পরবর্তীকালে দামু ও কামুর বীরত্বকে সম্মান জানাতে জমিদারবাড়ির সামনে তাঁদের মূর্তি বসানো হয়।
মণ্ডলবাড়ির সদস্যরা বলেন, হদলনারায়ণপুরে জমিদারির পত্তন হয়েছিল পুজো শুরুর অনেক আগে। সেই সময় নারায়ণপুর এলাকাটি বর্ধমান রাজার অধীনে ছিল। সেই সূত্রে বর্ধমান রাজার দেওয়ান মুচিরাম ঘোষের সঙ্গে এলাকার বাসিন্দা প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ শুভঙ্কর রায়ের পরিচয় হয়। শুভঙ্কর রায়ের কাছ থেকে শেখা সহজ গণিতের ধারা মুচিরাম ঘোষ পরবর্তীকালে বিষ্ণুপুরের মল্লরাজকে শিখিয়েছিলেন। তাতে তিনি মল্লরাজের বিশ্বাসভাজন হয়ে ওঠেন। এরপর মল্লরাজ তাঁকে মণ্ডল উপাধি দেন। সেই সঙ্গে পাশাপাশি দুই গ্রাম হদল ও নারায়ণপুর সহ বেশ কিছু পরগনার জমিদারিও তিনি পান।
পাত্রসায়রের প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত জমিদারবাড়ির পুজো খুব বেশি প্রচারের আলোয় না এলেও বাড়ির উঠানে প্রবেশ করলেই দর্শনার্থীর মনে অনন্য এক অনুভূতি জাগবে। বাড়ির সিংহদুয়ার পেরিয়ে ভিতরে ঢুকলেই নজর কাড়বে টেরাকোটার অপূর্ব সুন্দর রাসমঞ্চ, রথ, কালীমন্দির ও বৈঠকখানা। তারপরেই রয়েছে দুর্গামন্দির, আটচালা ও নাটমন্দির। বাড়ির পরের অংশে রয়েছে দামোদর, শিব ও লক্ষ্মীর মন্দির। দুর্গামন্দিরে রয়েছে সুদৃশ্য একটি পালকি। সপ্তমীর সকালে বাড়ির সদস্যরা ছ’রকমের বাদ্যবাজনা সহকারে পালকিতে করে স্থানীয় বোদাই নদীর ঘাট থেকে নবপত্রিকা বরণ করে নিয়ে আসেন। দশমীর দিন একইভাবে পালকিতে করে তা নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। জমিদার বাড়ির সাবেকি প্রথা অনুযায়ী জন্মাষ্টমীর দিন দেবী মূর্তির গায়ে গঙ্গামাটির প্রলেপ পড়ে। এরপর পুজোর যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু হয়। পুজোর সময় খাঁটি গাওয়া ঘিয়ে তৈরি হয় ১৪রকমের মিষ্টি। তার সঙ্গে ৫২পদের নাড়ু। পুরনো নিয়ম মেনে বাড়ির সদস্যরা মিলে সপ্তমীর রাতে যাত্রার আসর বসান। নবমীর রাতে জলসার আয়োজন করা হয়। তাতে সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠান হয়। ফিবছর পুজোয় দেশ বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জমিদার বাড়ির শতাধিক সদস্যের আগমন ঘটে। দেবী দর্শনে আশেপাশের গ্রাম থেকে বাসিন্দারাও ভিড় জমান।