পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

মাতৃপক্ষের ষষ্ঠীতেই কেন দেবীর বোধন? জানুন এর বিশেষ তাৎপর্য

October 9, 2024 | 2 min read

মাতৃপক্ষের ষষ্ঠীতেই কেন দেবীর বোধন?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আজ দেবী দুর্গাকে বোধনের দিন। খুঁটি পুজো বাদ দিলে আজকের দিনেই দেবী দুর্গার মুখের আচ্ছাদন উন্মোচন করা হয়।  দেবীপক্ষের এই দিনেই দেবীকে বোধন করে পুজো করেন রাম। বোধনের বিশেষত্ব  হল মা দুর্গাকে জাগ্রত করা। দুর্গার বোধন ঘিরে ছড়িয়ে রয়েছে নানা পৌরাণিক কাহিনি।   দেবী দুর্গার বোধনের একটি নির্দিষ্ট পৌরাণিক তাৎপর্য-ও রয়েছে। মহাষষ্ঠীতে কীভাবে সূচনা হয় দেবীর বোধন জেনে নিন—

কালিকাপুরাণ অনুসারে, রাবণবধে রামচন্দ্রকে সাহায্য করার জন্য রাত্রিকালে দেবীর বোধন করেছিলেন ব্রহ্মা। যদিও বাল্মীকির রামায়ণে শ্রীরামচন্দ্রের দুর্গাপুজার কোনও বিবরণ নেই। নবম ও দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত দেবীভাগবতপুরাণ ও কালিকাপুরাণে এর বিবরণ রয়েছে।

 পুরাণ মতে, সূর্যের উত্তরায়ণ হচ্ছে দেবতাদের দিন। উত্তরায়ণ বিষুবরেখা থেকে সূর্যের ক্রমশ উত্তরে গমন (শ্রাবণ হতে পৌষ)। গমনে সময় লাগে ছয় মাস। এই সময় দেবতারা জাগ্রত থাকেন। তাই এই সময় দেবতাদের পুজো করা শাস্ত্রসম্মত। এই সময় পুজো করলে আলাদা করে বোধনের দরকার পড়ে না। অন্যদিকে, সূর্যের দক্ষিণায়ণ দেবতাদের রাত। দক্ষিণায়ণে বিষুবরেখা থেকে সূর্যের ক্রমশ দক্ষিণে গমন করে (মাঘ থেকে আষাঢ়)। সূর্যের এই গমনকালের ব্যপ্তিও ছয় মাস। রাত তাই স্বভাবতই এই সময় দেবতারা ঘুমান। শরৎকাল দক্ষিণায়ণের সময় অর্থাৎ দেবতাদের রাত্রিকাল। এই সময় পুজো করা শাস্ত্রসম্মত নয়। সেই একই কারণে শরৎকাল পুজোর জন্যে উপযুক্ত সময় নয়। তাই এই সময় দেবতার পুজো করতে হলে, দেব-দেবীকে জাগরিত করতে হয়। জাগরনের এই প্রক্রিয়াটিই হল বোধন।

সংস্কৃত থেকে অকাল ও বোধন শব্দদুটি বাংলা ভাষায় তৎসম শব্দ হিসেবে গৃহীত হয়েছে। অকাল শব্দের অর্থ অসময়, যা শুভকর্মের জন্যে অনুপযুক্ত সময়। অন্যদিকে বোধন শব্দটির অর্থ উদ্বোধন, নিদ্রাভঙ্গকরণ। অকালবোধন শব্দবন্ধটির অর্থ অসময়ে বোধন বা জাগরণ অর্থাৎ অসময়ে দেবী দুর্গার আরাধনা।

শ্রীরামচন্দ্র রাবণকে পরাজিত করতে অসময়ে মায়ের পুজো করেছিলেন। তাই এই পুজোকে অকালবোধন বলা হয়। যেহেতু অকাল বোধন শরৎকালে হয়েছিল তাই একে শারদীয়া বলা হয়। কিন্তু ঘুমন্ত দেবীকে জাগ্রত করার জন্য স্বয়ং ব্রহ্মাকে দেবীস্তুতি করেছিলেন। পুজোর সূচনাক্ষণে স্বয়ং প্রজাপতি ব্রহ্মা দেখেছিলেন সাগরের বালুকাবেলার অনতিদূরে গহন অরণ্যে একটি বিল্ববৃক্ষের নীচে একটি আট থেকে দশ বছরের বালিকা আপন মনে খেলছে। ব্রহ্মা ধ্যানস্থ হয়ে জানলেন, সেই বালিকাই স্বয়ং গৌরী, কন্যকা। ব্রহ্মা চোখ মেলতেই সেই বালিকা ওই বিল্ববৃক্ষে লীন হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মা স্থির করলেন, দেবী দুর্গার সেই বোধনের পূজার্চনা হবে ওই বিল্ববৃক্ষের নীচে। তাই আজও দেবীর বোধনের আগে বিল্বশাখা বা বিল্ববৃক্ষকে পুজো করে তা প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। ​ব্রহ্মার আহ্বানে দেবী বিল্ববৃক্ষের এক বিল্বপত্রে কুমারী কন্যার রূপে আবির্ভূতা হন৷ আজও বিল্ববৃক্ষের নীচেই দেবীর বোধন হয়। ষষ্ঠীতিথির সন্ধ্যায় প্রথমে দেবীর বোধন হয়, তারপর হয় অধিবাস ও সবশেষে আমন্ত্রণ করা হয়৷

ষষ্ঠীর সকালেই বোধন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত গোটা পুজো পর্বে যেন কোনও বিঘ্ন না ঘটে, তাই দেবীর কাছে প্রার্থনা করা হয়। এরপর ঘট ও জলে পূর্ণ একটি তামার পাত্র মণ্ডপের কোণে স্থাপন করা হয়। এই স্থানেই দুর্গা ও চণ্ডীর পুজো করা হয়।তারপর হয় বোধন। বোধনের পর বিল্ব শাখার দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। ঘটের চারপাশে তীরকাঠিতে সুতো জড়িয়ে আমন্ত্রণ প্রক্রিয়া শুর হয়। এ ভাবেই শেষ হয় মহাষষ্ঠীর আচার। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী এ দিনই স্বর্গ থেকে মর্ত‍্যে পদার্পণ করেন দেবী দুর্গা। সঙ্গে তাঁর চার সন্তান লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীও আসেন। মনে করা হয়, বোধনের পর প্রতিমার মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#maha sashthi, #debi bodhon, #durga Pujo, #Ma Durga

আরো দেখুন