বাংলায় বিধানসভা উপনির্বাচনে ৬টি আসনে কাদের প্রার্থী করছে তৃণমূল?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলার ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে আগামী ১৩ নভেম্বর উপনির্বাচন রয়েছে। এই কেন্দ্রগুলি হল- সিতাই, মাদারিহাট, তালড্যাংরা, মেদিনীপুর, হাড়োয়া এবং নৈহাটি। আরজি কর কাণ্ডের আবহে এই উপনির্বাচন শাসকদলের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আরজি করের ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তি অনেকটাই নষ্ট হয়েছে। এই অবস্থায় কাদের প্রার্থী করলে ভোট টানা সম্ভব হবে তাই নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, মোটামুটি ভাবে ৬টি আসনে প্রার্থী বাছার প্রাথমিক কাজ হয়ে গেছে। আসন ধরে ধরে তিন জনের নাম সুপারিশ করা হয়েছে এক-দুই-তিন করে। সেই সুপারিশ লিপি পড়লেই আন্দাজ করা যাবে কোন আসনে কাকে প্রার্থী করা হতে পারে।
নৈহাটিতে সনৎ দে-র সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, তেমনই আবার মেদিনীপুর বিধানসভা আসনে প্রার্থী করা হতে পারে সুজয় হাজরাকে। সুজয় পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি। মূল ভাবনা হল, তাঁকে একটি সংসদীয় পদ দিলে তাঁর একটু ওজন বাড়তে পারে, এই আর কী। ঘটনা হল, এরই মধ্যে তৃণমূলে কেউ কেউ রটিয়ে দিয়েছিলেন দলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারকে মেদিনীপুর আসনে প্রার্থী করা হতে পারে। কিন্তু শেষমেশ হতাশ হতে পারেন জয়প্রকাশ।
তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি হলেন তৃণাঙ্কুর বন্দ্যোপাধ্যায়। হালিশহরের এই ছেলেটিকে নৈহাটি বিধানসভার উপ নির্বাচনে প্রার্থী করা হতে পারে বলে অনেক দিন ধরে গুঞ্জন চলছিল দলের মধ্যে। নৈহাটিতে বিধায়ক ছিলেন পার্থ ভৌমিক। লোকসভা ভোটে তিনি ব্যারাকপুর আসনে জেতায় নৈহাটিতে উপ নির্বাচন অনিবার্য হয়েছে। অনেকে মনে করছিলেন, পার্থ ভৌমিকও চান তৃণাঙ্কুরকেই প্রার্থী করা হোক। তা ছাড়া গত সোমবার পার্থ যেভাবে তৃণাঙ্কুরকে সঙ্গে নিয়ে দিদির সঙ্গে বিজয়া করতে গিয়েছিলেন, তাতেও সেই জল্পনা বেড়েছিল। তবে তৃণাঙ্কুরকে হয়তো হতাশ হতে হবে। শেষমেশ উপ নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী নাও করতে পারে দল। পরিবর্তে নৈহাটিতে প্রার্থী করা হতে পারে দলের স্থানীয় টাউন প্রেসিডেন্ট সনৎ দে-কে।
উত্তর চব্বিশ পরগনার হাড়োয়া বিধানসভায় বিধায়ক ছিলেন হাজি নুরুল ইসলাম। নুরুল লোকসভা ভোটে বসিরহাট আসনে জিতেছিলেন। সদ্য তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ফলে বসিরহাট লোকসভা ও হাড়োয়া বিধানসভা দুটি আসনেই উপ নির্বাচন হবে। আপাতত হাড়োয়া বিধানসভায় উপ নির্বাচন হবে ১৩ নভেম্বর। তৃণমূলের মধ্যে একটা জল্পনা ছিল, পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ববি হাকিমের মেয়ে প্রিয়দর্শিনী হাকিমকে হাড়োয়া আসনে প্রার্থী করার জন্য একটা দৌত্য শুরু হয়েছে। তবে জানা যাচ্ছে, প্রয়াত হাজি নুরুলের ছেলে রবিউল ইসলামকে প্রার্থী করা হতে পারে। তিনি এখন জেলা পরিষদের সদস্য।
এ ছাড়াও উত্তরবঙ্গের মাদারিহাট ও সিতাই দুই বিধানসভা আসনে উপ নির্বাচন রয়েছে। এই দুই আসনে দুই স্থানীয় নেতাকে প্রার্থী করা হতে পারে বলে খবর।
পড়ে থাকল শুধু বাঁকুড়ার তালড্যাংরা আসনটি। এই আসনে বিধায়ক ছিলেন বাঁকুড়া তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী। অরূপ এখন বাঁকুড়ার সাংসদ। তাই তালড্যাংরায় উপ নির্বাচন হবে। সূত্রের খবর, জেলা সভাপতি হওয়ার সুবাদে অরূপ কয়েকটি নাম সুপারিশ করেছিলেন। তবে তা আই প্যাক বা কালীঘাটের নাপসন্দ। এমনিতে অরূপকে জেলা সভাপতি পদ থেকেও অচিরে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।
তবে কৌতূহলের বিষয় হল, তালড্যাংরায় প্রার্থী কাকে করা হবে? জানা গিয়েছে, যে তিনটি নামের সুপারিশ এসেছে, তার মধ্যে একজন প্রাক্তন বিধায়ক ও প্রবীণ নেতা রয়েছেন। তালড্যাংরায় ষোল সালের বিধানসভা ভোটে সিপিএমের অমিয় পাত্রকে পরাস্ত করে জিতেছিলেন সমীর চক্রবর্তী। কিন্তু একুশের ভোটে সমীরবাবু তালড্যাংরা থেকে আর প্রার্থী হতে চাননি। বিধানসভা ভোটে প্রার্থী না হলেও তৃণমূলের বাঁকুড়া অ্যাফেয়ার্সের অন্যতম কাণ্ডারি হলেন কালীঘাট ঘনিষ্ঠ সমীর চক্রবর্তী ওরফে বুয়া চক্রবর্তী। লোকসভা ভোটে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর আসন দুটির জন্য তাঁকেই পর্যবেক্ষক করে পাঠানো হয়েছিল। একটি সূত্রের মতে, উপযুক্ত প্রার্থী না পেলে সমীরবাবুকে দিদি ফের পাঠাতে পারেন তালড্যাংরায়।