পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

দীপান্বিতা অমাবস্যায় কেন কালীপুজো? নেপথ্যে কোন ইতিহাস?

October 31, 2024 | 2 min read

দীপান্বিতা অমাবস্যায় কেন কালীপুজো? নেপথ্যে কোন ইতিহাস?

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দেবী কালীকা হলেন শক্তির আধার। রক্তবসনা রক্তমাল্যধারিণী কালরাত্রিরূপা কালী হলেন রক্তপিপাসু এক দেবী। অশুভ শক্তিকে নাশ করতে মনোহর দেবী মূর্তি ত্যাগ করে ভয়ংকর কালীকা রূপ ধারণ করেন দেবী পার্বতী। যার আরাধনা করা হয় গোটা জগৎ জুড়ে। আবার কালীর কথা বললেই নদীয়ার নাম প্রথমেই এসে পড়ে কারণ বাংলায় বর্তমানে কালীর যে রূপ প্রচলিত, তা দান করেছিলেন নবদ্বীপের কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ।  

কালীপুজোয় প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা বঙ্গে প্রচলিত আছে। তবে জানেন কী দীপান্বিতা অমাবস্যায় কেন করা হয় কালীপুজো? এক ঝলকে দেখে নিন তার ইতিহাস  

ষোড়শ শতাব্দীতে নবদ্বীপের স্মৃতিশাস্ত্রবিৎ ও নব্যস্মৃতির স্রষ্টা রঘুনন্দন দীপান্বিতা অমাবস্যায় লক্ষ্মীপুজোর বিধান দেন।  তবে কালীপুজোর কোনও উল্লেখ করেননি তিনি। তারপর অষ্টাদশ শতকে প্রকাশিত কালী সপর্যাস বিধিতে প্রথম বার দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপুজোর বর্ণন পাওয়া যায়। কিন্তু সপ্তদশ শতকে বাংলায় নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকেই বাংলায় কালীপুজোর প্রবর্তক বলে মনে করা হয়।

 কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ এর আগে অখণ্ড বাংলায় মূর্তি গড়ে কালীপুজোর প্রচলন ছিল না। কিন্তু সাধনার চরম অবস্থায় বিগ্রহ মূর্তি ছাড়া কৃষ্ণানন্দের মন তুষ্ট না হওয়ায় সাধনায় সিদ্ধিলাভ হতে দেরী হতে থাকে। পরম সাধকের তখন মনে হতে থাকে, মায়ের একটি মূর্তি থাকলে তাঁর রাঙাচরণে নিজেকে সমর্পণ করা যেত। কিন্তু কেমন হবে সেই মায়ের রুপ, যে রূপে তিনি তাঁর মহিমা প্রকাশ করবেন! এই চিন্তায় কৃষ্ণানন্দকে অস্থির করে তুলল। শেষে এক অমাবস্যার নিশুতি রাতে জগজ্জননীর কাছে এক সাকার মূর্তি কামনায় ধ্যানমগ্ন হলেন। সেই সময় তিনি দৈবাদেশ পান। যদিও কারো কারো অভিমত তিনি রাতেই স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। 

মায়ের মূর্তি নির্মাণ নিয়ে কথিত আছে কৃষ্ণানন্দ শুয়ে আছেন সেইসময় মা কালিকা তাঁর শিয়রে উপস্থিত হয়ে বললেন, তুই আমার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে সমাজে কালী পূজার প্রচলন কর। ঘুমের মধ্যেই তিনি মাকে বললেন, তুমি তো আমায় দেখা দাওনি, তোমায় কেমন ভুবন ভোলানো রূপ তা জানব কেমন করে? তখনই কৃষ্ণানন্দকে দেবী জানিয়ে দিলেন চিন্তা করিস না। আগামীকাল সকালেই দেখতে পাবি। নদীয়া জেলায় নবদ্বীপ বৈষ্ণবধর্মের পীঠস্থান হিসেবেই বেশি পরিচিত হলেও শাক্তধর্মের প্রচারও এখানে কম নয়।এখানে  আগমেশ্বরী নামে একটি পাড়া আছে। শাক্ততীর্থ পোড়ামা তলা থেকে হাঁটা পথে মিনিট আটেক। বর্তমান মন্দিরটি আধুনিক এবং মাঝারি আকারের। মাথায় ত্রিশূল। মন্দিরে বাঁধানো বেঁদি। পঞ্চমুন্ডির আসনে পোতা দুটি ত্রিশূল ও একটি খর্গ। প্রায় পাঁচশো বছর আগে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ এখানে স্থাপন করেছিলেন পঞ্চমুন্ডির আসন। মন্দিরের দেওয়ালে পাথরের ফলকে লেখা আছে শ্রীশ্রীরী আগমেশ্বরীমাতার মন্দির। একবার কার্তিক মাসের অমাবস্যা উপলক্ষে কৃষ্ণানন্দ আগমেশ্বরী কালী পুজোর বহু উপচার দিয়ে আয়োজন করছেন পঞ্চমুন্ডির আসনগৃহে। দেবীবিগ্রহের সামনে বসে পুজো করছেন স্বয়ং কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। কৃষ্ণানন্দের মন্ত্র হয়ে উঠল সেদিন চৈতন্যময়। বিগ্রহ যেন সচল হয়ে উঠলেন। মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী হয়ে জ্যোতির্ময় মূর্তিতে আবির্ভূত হয়ে কৃষ্ণানন্দের নিবেদিত পুষ্পার্ঘ্য ও ভোগান্ন গ্রহণ করতে থাকলেন। সেই থেকে প্রতিবছর দীপান্বিতা কালী পুজোয় মূর্তি গড়ে পূজা করা হয় বছরের পর বছর। পরদিন বিসর্জন দেওয়া হয় গঙ্গাগর্ভে। 

এর আগে কালীর উপাসকরা তামার টাটে কালীর যন্ত্র এঁকে অথবা খোদাই করে পুজো করতেন। অষ্টাদশ শতকে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় এই পুজোকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এরপর উনিশ শতকে কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্র ও বাংলার ধনী জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপুজো বাংলার প্রতি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।  

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#ma kali, #Festival, #Kali pujo, #deepaboli, #dipannita amabasya, #diwali

আরো দেখুন