শ্মশান কালীর পুজোর সঙ্গে শবদেহর সম্পর্ক কী?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: পণ্ডিতেরা বলেন মা কালী মূলত ৮ প্রকার, দক্ষিণাকালিকা, সিদ্ধকালিকা, গুহ্যকালিকা, শ্রীকালিকা, ভদ্রকালী, চামুণ্ডাকালিকা, শ্মশানকালিকা ও মহাকালী।
কালীপুজোর সঙ্গে শ্মশানের সম্পর্ক অনেকটা গল্প ও কবিতার মতো। যেন, একে অপরের পরিপূরক। দশমহাবিদ্যার প্রথম মহাবিদ্যা হল কালী। বিভিন্ন শ্মশানঘাটে কালীর যে রূপটির পুজো করা হয়, তা’শ্মশানকালী’ নামে পরিচিত। বাংলার প্রায় সব শ্মশানেই শ্মশানকালীর পুজো হয়। কোথাও প্রতিদিন, কোথাও বা বাৎসরিক পুজোর রেওয়াজ। কথিত আছে, রাজ্যের বহু শ্মশানে আগে ভিড় জমাতেন তান্ত্রিক ও সাধকরা। শবসাধনায় বসতেন অনেকে। বাড়িতে শ্মশান কালী পুজো হয় না। বাড়িতে যে কালী পুজো করা হয়, তাঁকে বলা হয় রক্ষা কালী বা শ্যামা কালী। যেখানে পুরোহিতদেরই পুজো করার নিয়ম। আবার, শ্মশান কালীর সাধনা করেন মূলত তন্ত্রসাধক শ্মশানবাসীরা।
শ্মশানকালী অঞ্জন পর্বতের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণ শুষ্ক শরীর বিশিষ্ট, রক্তিম আভা চক্ষু, এনার কেশ আলুলায়িত। এই দেবীর ডান হাতে সদ্য চিহ্ন বাম হাতে পূর্ণ নবনির্মিত পানপাত্র। দেবী সর্বদা সদাশিবের উপর দণ্ডায়মান। কপালে অর্ধচন্দ্র শোভিতা।
শ্মশান কথাটির অর্থ হল মৃত স্থান। চলতি কথায় যেখানে সব দাহ করা হয়। করালবদনী আদ্যা শক্তি মায়ের বিচরণক্ষেত্র। মা কালী কে ধ্বংসের দেবী বলে। এই ধ্বংস মানে সর্বনাশ করা নয়। এর অর্থ তিনি নিজেই সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড রচনা করেছেন। আবার তিনি গুটিয়ে নেন। এখানে কালী পুজো করার অর্থ হল মানুষ তার শেষ জীবনে মায়ের কোলে আশ্রয় পায় এবং তাতে সে অসীম শান্তি ও আনন্দ পায়। শ্মশান মন্দিরের মতোই পবিত্র। মন্দিরের শাস্ত্র পাঠ করে দেহের পরিণামের কথা বলা হয়। সেটার জীবন্ত উদাহরণ স্বচক্ষে দেখা যায় শ্মশানে গেলে। তাই শ্মশান মা কালীর এত প্রিয় স্থান।
শ্মশানকালীর পুজোর নির্দিষ্ট নিয়মও রয়েছে। তান্ত্রিক মাছ, মাংস আর মদ দ্বারা পূজা করে থাকেন। তবে মাছ মাংস মদ এইসবই সংকেত মাত্র। এই পূজা সাধারণত শ্মশানেই হয়। সাধু-সন্তরা শ্মশানে এই কালী কে পুজো করে। শ্মশানের কালীর হাতের অস্ত্র খড়্গ। এর বাহন শিয়াল।
রাজ্যে এমন একাধিক শ্মশান রয়েছে, যেখানে শবদেহ না আসা পর্যন্ত পুজো শুরু হয় না। দক্ষিণ কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানেও এমনটাই রেওয়াজ। একদিকে শ্মশানকালী পুজো হবে আর অপরদিকে চলবে শবদেহের দাহ। কেওড়াতলায় এই পুজো করেন ডোমেরা। পুজোর নির্দিষ্ট সময়ে একটি মৃতদেহ দাহ করার জন্য এনে রাখা হয়।
বীরভূমের দুবরাজপুরেও শ্মশান কালীর পুজো হয়। এই মন্দিরের বর্তমান পুরোহিত মশাই জানান এই মন্দির প্রায় হাজার বছরের পুরনো। এই মাকে এক সাধক তপস্যা করে পান। তখন ভৈরব নামে এক পূজারী পুজো করতেন। মায়ের বেদী তৈরি ১০৮ টি মরার মাথা দিয়ে এবং সেই বেদীর উপরে মা পূজিত হন। উলঙ্গ হয়ে মাকে পুজো করতে হয় এবং পুজো করার সময় মায়ের মন্দিরের ভিতরে কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। মায়ের ঘট ভরতে যাওয়ার সময় সামনে শৃগাল যায়। এই প্রথাটি অনুযায়ী বিগত হাজার বছর ধরে হয়ে আসছে। মা দক্ষিণা কালী রূপে পূজিত হন এখানে। সারাবছর থেকে একাদশীর দিন মায়ের নিরঞ্জন করা হয়।
রাজ্যের অন্যপ্রান্তের শ্মশানের মতো দুর্গাপুর বীরভানপুরের মহাশ্মশানেও কালীপুজোও হয়। এখানকার দেবী পূজিত হন বৈষ্ণব মতে। এখানে ছাগল বলি প্রথা নিষিদ্ধ। জানা যায়, শ্মশানে শব দেহ না আসা পর্যন্ত দেবীর ভোগ নিবেদন করা হয় না।