শ্যামা পুজো শেষ হলেও দেখা নেই শ্যামাপোকার, শঙ্কিত পরিবেশকর্মীরা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: শ্যামাপুজোয় শ্যামাসঙ্গীতের মতোই মিছিল করে আলোর উৎসবে সামিল হয় শ্যামাপোকারা৷ শ্যামাসঙ্গীতে মনের আরাম হলেও শ্যামাপোকায় হয় বিরক্তির উদ্রেক৷ তা সত্ত্বেও বিশেষত এই সময়টার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে এই ক্ষুদ্র কীট৷ তবে এবছর কালীপুজো পেরিয়ে গেলেও শ্যামাপোকা যেন এক্কেবারে ভ্যানিশ৷ গত দু-একবছর ধরেই তারা নিরুদ্দেশ।
পতঙ্গবিদরা কিন্তু বিষয়টিকে এত সহজে ছেড়ে দিতে রাজি নন। পরিবেশকর্মী চিত্রক প্রামাণিক বলেন, ‘ধান গাছে অতিরিক্ত কীটনাশক স্প্রে করা, সিএফএল ও এলইডি আলোর ব্যবহার দূষণ ঘটায়। শ্যামাপোকা কমার এটাই অন্যতম কারণ। পরিবেশ রক্ষায় ক্ষুদ্র একটি পোকা, পিঁপড়ে, প্রজাপতিরও গুরুত্ব রয়েছে। সেইরকম শ্যামাপোকারও গুরুত্ব। সে না থাকলে বহু প্রাণীর খাদ্যসঙ্কট দেখা দেবে। তারা হারিয়েও যাবে। এই কারণে বাঁচাতে হবে সবাইকে। শ্যামাপোকা কমে যাওয়া পরিবেশের পক্ষে অশুভ সঙ্কেত।’
দুর্গাপুজোর পর থেকেই টুকটাক দেখা মিলত শ্যামাপোকার। কালীপুজোর সময় বাড়ি থেকে রাস্তাঘাট – এমন কোনও আলো থাকত না, যার দখল নিত না শ্যামাপোকার ঝাঁক। ঘরের টিউব লাইট এমনকি নাইট ল্যাম্প ঘিরেও উড়ে বেড়াত এই পোকার দল। ঘরে ঘরে ও দোকান-বাজারে এই পোকার হাত থেকে রেহাই পেতে গাছের ডাল লাগিয়ে রাখতে হত। এদের প্রধান খাদ্য ধান গাছের রস। ধান উৎপাদনকারী রাজ্যেগুলিতেই এদের দেখা যায়।
পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, শ্যামাপোকা কমে যাওয়ার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। বাগনান কলেজের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক ও গবেষক ডঃ আক্রামুল হক বলেন, ‘কীটনাশক স্প্রে করার ফলে এইসব পোকার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। তা খেয়ে পোকাগুলি প্রথমে সাদা হয়ে যাচ্ছিল। আমার সন্দেহ, এর ফলে শ্যামাপোকা তার প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। সে কারণেই দেখা যাচ্ছে না। শ্যামাপোকা শুধু নয়, সব ধরনের পোকার ক্ষেত্রেই এই প্রবণতা অশনি সঙ্কেত।’ দেখা নাই বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর চর্চা শুরু হয়েছে। হচ্ছে বিস্তর লেখালেখি। শহরাঞ্চলে মোটেও দেখা যায়নি শ্যামাপোকা। তবে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কিছু জায়গায় অল্পবিস্তর দেখা মিলেছে বলে লিখেছেন কয়েকজন।