রাজ ইতিহাস বিজড়িত কাজলাগড়কে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ রাজ্যের
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চলেছে কাজলাগড়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ঐতিহাসিক স্থান কাজলাগড়। জেলা ও ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে রাজ-পুষ্করিণী, রাজ-পরিখা, রাজ-দেউল সহ ভগ্নস্তূপে পরিণত হওয়া রাজবাড়ি, রাজপরিবারের অন্দর মহলকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রখ্যাত নাট্যকার তথা কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কাজলাগড়কে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে। তিনি টানা প্রায় ৩ বছর কাজলাগড় রাজ এস্টেটের সেটেলমেন্ট অফিসার ছিলেন। ওই সময় তিনি কাজলাগড়ে বসে বহু কবিতা ও নাটক লিখেছিলেন।
এছাড়াও জানা যায়, কাজলা দিঘির পাড়ে ছিল ব্রিটিশ সরকারের সাব রেজিস্ট্রার অফিস। ১৮৯০ সালে এখানে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বর্ধমান রাজার কোর্ট অফ ওয়ার্ডস স্টেটের সুজামুঠা পরগনার জরিপ বিভাগের সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে দায়িত্ব নেন। প্রায় তিন বছর স্ত্রী সুরবালাদেবীকে নিয়ে কাজলাগড়ে কাটিয়েছিলেন তিনি। ১৯৪২ সালে আগষ্ট আন্দোলনের সময় বিপ্লবীরা সেই অফিসটিতে আগুন ধরিয়ে দেন।
বর্তমান কাজলাগড় অঞ্চল ছিল সুজামুঠা মাহিস্য জাতির রাজার অধীনে। এর ‘রাজধানী’ ছিল কাজলাগড়। জানা যায়, সুজামুঠা বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গোবর্ধন রণঝাঁপ। তাঁর পরবর্তী বংশধর মহেন্দ্র নারায়ণের রাজত্বকালে বংশের প্রভুত উন্নতি হয়। আনুমানিক ১৭৬৯ সালে কাজলাগড়ে রাজবাড়ি গড়ে তুলেছিলেন রাজা মহেন্দ্র নারায়াণ। গোপাল জিউ এবং নবরত্ন মন্দিরটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। পরে রাজা দেবেন্দ্র নারায়ণ প্রজাদের তৃষ্ণা মেটাতে বিশাল পুকুর খনন করেন। সেটি কাজলা দিঘি নামে পরিচিত। আনুমানিক ১৮৬০ সাল নাগাদ সুজামুঠার সাম্রাজ্য নিলামে ওঠে। সেটা কিনে নেন বর্ধমানের মহারাণী নায়ারণ কুমারী। এর পর থেকেই বর্ধমান রাজবাড়ির কাছাড়ি বাড়ি হিসেবে কাজলাগড় ইতিহাসে পরিচিতি লাভ করে।
প্রায় চারশো বছর আগে এই জায়গা ছিল জলাকীর্ণ ও বন্য জন্তুদের অবাধ বিচরণ ভূমি। শোনা যায়, রণঝাঁপ গোষ্ঠীর লোকেরা এখানে শিকার করার সময় দেবীর স্বপ্নাদেশ পান কাজলা কালিমাতার পুজো করার জন্য। সেই থেকে এই স্থানের নাম হয় কাজলাগড় পরে কাজলাগড়।
জানা গিয়েছে, ১৯৫৬ সালে জমিদারি অধিকার আইনের বিলুপ্তির আগে পর্যন্ত এই রাজবাড়িতেই রাজপরিবারের সদস্যরা থাকতেন। তার পর ধিরে ধিরে রাজবাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে থাকে।