মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘ঠান্ডা লড়াই’
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানিয়ে দিলেন, মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করাই অর্থনীতির গতিবৃদ্ধির প্রধান দাওয়াই। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে এলে মানুষ সঞ্চয় করতে পারবে। আর হাতে টাকার জোগান থাকলে বাড়বে ক্রয়ক্ষমতা। একমাত্র তাহলেই অর্থনীতি এবং বাজার গতি পাবে। সরল অঙ্ক। তাই গভর্নর মনে করেন, মূল্যবৃদ্ধির হার স্থিতিশীল থাকা সবথেকে বেশি প্রয়োজন। অর্থাৎ, কেন্দ্রের সম্পূর্ণ উল্টো মেরুতে অবস্থানই পাকাপোক্ত করছে আরবিআই। ঠিক এই কারণেই শক্তিকান্ত দাস বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সম্মেলনের একটি অনুষ্ঠানে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, তাদের কাছে পাখির চোখ একটাই—মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরানো।
মোদী সরকারের অস্বস্তির কারণ অবশ্যই রেপো রেট। কারণ, মূল্যবৃদ্ধির জন্য আরবিআই কিছুতেই রেপো রেট কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। আর এতেই চটছে কেন্দ্র। তাদের ক্ষোভ, মূল্যবৃদ্ধির (বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি) কারণকে অজুহাত দেখিয়ে আর কতদিন রেপো রেট আকাশছোঁয়া থেকে যাবে? গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এই যুক্তিতেই তোপ দেগেছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। তাঁর দাবি ছিল, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অতিরিক্ত হইচই হচ্ছে। এতটা উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজনই নেই। কারণ, স্বাধীনতার পর থেকে মূল্যবৃদ্ধির হার সর্বনিম্ন। তাই রেপো রেট এখনই কমানো উচিত। সেবারও জবাব দিয়েছিলেন গভর্নর। কিন্তু এভাবে মূল্যবৃদ্ধিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টরের তকমা দিয়ে কেন্দ্রের বিরোধিতা করেননি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্য সরাসরি অগ্রাহ্য করা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্তার জন্য প্রোটোকল বহির্ভূত। তাই তিনি শুধু মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, রেপো রেট সাড়ে ৬ শতাংশে রেখে দেওয়ার জন্যই কিছুটা হলেও সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরানো গিয়েছে। তারপরও কিন্তু খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রয়েছে উদ্বেগের চরম সীমাতেই। এদিন কিন্তু শক্তিকান্ত দাস সরাসরি বলেছেন, মূল্যবৃদ্ধিকে স্থিতিশীল রাখতেই হবে। তাহলেই গরিবের বোঝা কমবে। মূল্যবৃদ্ধির হার অগ্রাহ্য করলে আবার সব হিসেবে গোলমাল হয়ে যাবে। আর্থিক বৃদ্ধির হার নিয়ে গভর্নর সন্তুষ্ট হলেও বর্তমানে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি তাঁকে উদ্বেগেই রেখেছে। আরবিআই গভর্নরের বক্তব্য, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি দ্রুত ৫ শতাংশের নীচে নামাতেই হবে। এখানেই বিরোধ বাড়ছে দু’পক্ষের। কারণ এখন কেন্দ্রের লক্ষ্য, উৎপাদনের হার বাড়ানো। তাহলে বাণিজ্যিক সক্রিয়তা বাড়বে। কিন্তু ব্যাঙ্ক ঋণের উপর সুদের হার, অর্থাৎ রেপো রেট না কমলে সরকারের এই মরিয়া প্রচেষ্টা অধরাই থেকে যাবে।