দেশে প্রকট হচ্ছে ধর্মীয় মেরুকরণ, মোদীকে চিঠি প্রাক্তন আমলা, রাষ্ট্রদূতদের
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ সীমান্তের দু-পাশেই বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি ধর্মস্থান নিয়ে বিতর্ক লেগেই আছে। ইতিমধ্যেই কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির সংলগ্ন জ্ঞানবাপী ও মথুরার কৃষ্ণজন্মভূমি লাগোয়া শাহি ঈদগা বিতর্ক আদালতে পৌঁছেছে। উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে মন্দির-মসজিদ বিতর্কে প্রাণ গিয়েছে বেশ কয়েকজনের। আজমিরের মইনুদ্দিন চিস্তির দরগা নিয়েও বিতর্ক আরম্ভ হয়েছে। স্বঘোষিত গো-রক্ষক, ধর্ম-রক্ষকদের তাণ্ডব তো আছেই। ধর্মের নামে মেরুকরণকে ভালো চোখে দেখছেন না দেশের প্রাক্তন আমলা, মুখ্যসচিব, রাষ্ট্রদূত ও উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিকরা। উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন তাঁরা। প্ল্যানিং কমিশনের প্রাক্তন সচিব এনসি সাক্সেনা, দিল্লির প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট গর্ভনর নাজিব জং, প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এসওয়াই কুরেশি, ব্রিটেনে ভারতের প্রাক্তন হাই কমিশনার শিব মুখোপাধ্যায়, অবসরপ্রাপ্ত ভাইস চিফ অব আর্মি স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জামিরুদ্দিন শাহ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর রবি গুপ্তা প্রমুখেরা চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
তাঁদের মত, এ দেশের সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্রম-অবনতি ঘটছে। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজনের ফলে সংখ্যালঘুরা উদ্বিগ্ন ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। দেশভাগ এবং তৎকালীন সাম্প্রদায়িক হিংসার কথা মোদীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন সরকারি আধিকারিকরা। চিঠিতে তারা জানিয়েছেন, দেশভাগ ও তার পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রদায়িক হিংসার স্মৃতি এখনও রয়ে গিয়েছে। নৃশংস গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ বছরে বিভিন্ন রাজ্য সরকার রীতিমতো পক্ষপাতের ভূমিকা নিচ্ছে। যা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তবে সরাসরি কোনও রাজ্যের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
গো রক্ষকদের তাণ্ডব, গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে সংখ্যালঘু বিদ্বেষী বক্তৃতা, ব্যবসা বয়কটের ডাকের মতো বিষয়কে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। বিভিন্ন রাজ্যে বুলডোজার দিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও তুলে ধরেছেন আমলারা। সাম্প্রতিক মন্দির-মসজিদ বিবাদও স্থান পেয়েছে চিঠিতে। তাঁদের বক্তব্য, হিন্দুত্ববাদী দাবি করে কিছু দুষ্কৃতী গোষ্ঠী মসজিদ, দরগায় পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষা চাইছে। তাদের দাবি, মন্দির ভেঙে সংখ্যালঘুদের ধর্মস্থান তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে প্লেসেস অব ওয়রশিপ অ্যাক্ট (১৯৯১) মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন আমলারা।
প্লেসেস অব ওয়রশিপ অ্যাক্ট অনুযায়ী, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের সব প্রান্তে যেখানে যে ধর্মস্থান যেমনভাবে আছে, তেমনই থাকবে। মোদীর প্রতি তাঁদের সাফ বার্তা, এ ধরনের অশান্তি, বিশৃঙ্খলা চললে কোনও সমাজ এগতে পারবে না। ভারতের উন্নয়নের স্বপ্নও বাস্তবায়িত হতে পারবে না। দেশের সচেতন নাগরিক হিসাবে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ আশা করছেন।