পরাণের পরোটার দোকান ছিল কৃষ্ণনগরের প্রথম রেস্টুরেন্ট, যা আজ ইতিহাস
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: কৃষ্ণনগর বা স্থানীয় জবানে ‘কেষনগর’ শহর মানেই কি কেবল রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, ঘূর্ণির মাটির পুতুল অথবা জগদ্ধাত্রী পুজো? এক্কেবারেই না। কারণ এ শহরের আনাচেকানাচে লুকিয়ে রয়েছে বহু অজানা কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সময়ের সঙ্গে সে সব ইতিহাস বিস্মৃতির অতলে। তার মধ্যেই অন্যতম ‘পরাণ কত্তার পরোটা’।
আজকের চকচকে পোস্ট অফিসের মোড়ে সেযুগে ভিড় টানত টালির চালায় প্রাণকুমার দে ওরফে পরাণের দোকানটাই। আজ সে দোকান নেই। মাথা তুলেছে ‘সান্যাল মার্কেট’। অথচ এককালে সেখান থেকেই হামাগুড়ি দেওয়া শুরু হয়েছিল শহরের রেস্তরাঁ কালচারের। বর্তমান মার্কেটের জায়গাতেই এক সময় ছিল হেমেন্দ্রনারায়ণ সান্যালের বাড়ি। সেখানেই ঢাকাই পরোটা ভাজত পরাণ।
তবে পরোটা বিখ্যাত হওয়ার কারণ তার অভিনব বানানোর পদ্ধতি আর সঙ্গে সুস্বাদু আলুর দম কিংবা মাংস। স্থানীয় ইতিহাস বলে, গোল লেচি অল্প বেলে, চাকু দিয়ে কেটে ছোট করে নেওয়া হতো। তারপর সেগুলিকে শঙ্কু আকৃতি দিয়ে সেই শাঙ্কব লেচি গোল করে বেলে পরোটা করা হতো। ভাজার সময় মাঝে বসিয়ে দেওয়া হতো ভারী ওজন। ফলে পরোটার চারপাশ ঢাকের মতো ফুলে উঠলেও মাঝখানটা তৈরি হতো পাপড়ের মতো মুচমুচে। অভিনব এই প্রস্তুতি কৌশলের জন্যই মোটামুটি স্বাধীনতা উত্তর সময়েইবিখ্যাতহয়ে গিয়েছিলেন পরাণ কত্তা। আজও শহরের বৃদ্ধরা বলেন, পোস্ট অফিসের মোড় দিয়ে ওই গন্ধ ডিঙিয়ে খালি পেটে ফেরা অসাধ্য ছিল।
জনপ্রিয়তার ফলেই সে যুগে বৈঠকখানা হয়ে উঠেছিল পরাণ কত্তার দোকান। ছেলে ছোকরাদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে থাকতদিনভর। কতদূর ছড়িয়েছিল এর জনপ্রিয়তা? খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, অষ্টবক্রর (রণজিৎ বন্দ্যপাধ্যায়) ‘গোয়ারীর কাব্য’ বইতেও ঠাঁই হয়েছিল পরাণ ও তাঁর দোকানের। তিনি লিখছেন—‘এরা হল শিবুদের সঙ্গী/যেন ডাহা নন্দী বা ভৃঙ্গী,/ঐ দোকান সারাইখানা ঢঙেতে।/পরাণের পরোটার গন্ধে/গুলতালি করে মহানন্দে/দেবেন, বাগু ও দনু, চিত্ত,/নেংটু, শিশির খুসী-চিত্ত।’বিষয়টি নিয়ে শহরের গবেষক সুপ্রতিম কর্মকার বলেন, একটা ঐতিহাসিক শহর থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে যায় ধীরে ধীরে। ঠিক যেভাবে কেষনগর শহর থেকে হারিয়ে গিয়েছে পরাণ কত্তার গল্প। অথচ দেখুন, আজ গাদাখানেক রেস্টুরেন্টের ভিড়ে এটাই কিন্তু শহরের ‘ফার্স্ট রেস্টুরেন্ট’ এবং শহরের প্রাচীন ‘ঠেক’।