ওয়াকফ ইস্যুতে মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো উচিত খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের, CBCI বৈঠকে সওয়াল খ্রিস্টান MP-দের
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের, ওয়াকফ সংশোধনী বিল ইস্যুতে মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। এ বিষয়ে নীতিগতভাবে অবস্থান নেওয়া উচিত কারণ, এটি সংবিধানে বর্ণিত সংখ্যালঘুদের অধিকারে আঘাত আনছে। রাজধানী নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ক্যাথলিক বিশপদের সম্মেলনে খ্রিস্টান সাংসদেরা এই বিষয়ে সরব হয়েছেন।
সিবিসিআই, ভারতের অন্যতম অগ্রণী ধর্মীয় সংস্থা। পাশাপাশি এ’দেশে ক্যাথলিকদের সর্বোচ্চ সংস্থা।বিগত সপ্তাহে সমস্ত খ্রিস্টান সাংসদদের বৈঠক ডেকেছিল সংস্থাটি। বৈঠকে প্রায় ২০ জন সাংসদ উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সদস্য।
তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, কংগ্রেস সাংসদ হিবি ইডেন, ডিন কুরিয়াকোস, আন্তো অ্যান্টনি, সিপিআই(এম) সাংসদ জন ব্রিটাস প্রমুখেরা বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। পিটিআইকে এক সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জর্জ কুরিয়ানও পরে বৈঠকে যোগ দেন। সিবিসিআই-এর সভাপতি আর্চবিশপ অ্যান্ড্রুস বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন, যা কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথম এমন বৈঠক হল।
সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিশেষ করে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান আক্রমণ, হুমকি এবং খ্রিস্টান প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে এফসিআরএর-র অপব্যবহার ইত্যাদির বিরুদ্ধে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের অধিকারের সুরক্ষায় খ্রিস্টান সাংসদদের ভূমিকা কী হবে, তা-ই ঠিক করাই ছিল আয়োজকদের লক্ষ্য।
সূত্রের খবর, একজন প্রবীণ বিরোধী সাংসদ পরামর্শ দিয়েছেন যে, সম্প্রদায়ের (খ্রিস্টান) নেতৃত্বের উচিত ইতিবাচক পদক্ষেপগুলোকে তুলে ধরা উচিত। আজ যে’সব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা হচ্ছে সেগুলোও জানানো উচিত। কেবলমাত্র নেতিবাচক সংবাদে প্রতিক্রিয়াশীল হওয়া উচিত নয়। একটি পরামর্শ ছিল, সরকার এবং জনসাধারণের কাছে জানানো যে খ্রিস্টান প্রতিষ্ঠানে পড়া চার জনের মধ্যে তিন জন পড়ুয়া ভিন্ন সম্প্রদায়ের।
একজন সাংসদ আরও বলেছেন, “photo ops” বন্ধ করার প্রয়োজন রয়েছে। খ্রিস্টান নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, “যাঁরা সংবিধান রক্ষা করছে না তাদের ডাকা উচিত নয়।”
সভায় যোগ দেওয়া অন্য একজন সাংসদ নিশ্চিত করেছেন যে, একাধিক বিরোধী সাংসদ ওয়াকফ সংশোধনী বিলের কিছু সুপারিশের প্রতি তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন, যা এখন যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) বিবেচনাধীন। বিলটি অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে অমুসলমান সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল এবং ওয়াকফ বোর্ডের গঠন পরিবর্তন করে।
বৈঠকে উপস্থিত কেরলের আরেক সাংসদ পিটিআইকে বলেছেন, লোকসভা এবং দশ রাজ্যের বিধানসভায় অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের (খ্রিস্টানদের) আসন বাতিল করার বিষয়টিও বৈঠকে উঠেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কিছু খ্রিস্টান প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে, ফরেন কন্ট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট (এফসিআরএ) লাইসেন্স বাতিল করা হচ্ছে, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু সাংসদেরা ২০১৪ সাল থেকে সরকারের সঙ্গে চার্চের নেতৃত্বর সখ্যতার সম্পর্কের তীব্র সমালোচনা করেছেন। এমনকি একজন সাংসদ পরামর্শ দিয়েছেন, এটি ‘লেনদেন’-র সম্পর্কে পরিণত হচ্ছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা পিটিআইকে একথা বলেছেন। চার্চ নেতৃত্ব ধৈর্য ধরে সাংসদদের বক্তব্য শোনেন। ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জর্জ কুরিয়ানও যোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি দেরিতে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ততক্ষণে বেশিরভাগ বিরোধী সাংসদদের বক্তব্য রাখা হয়ে গিয়েছিল। দুই খ্রিস্টান বিজেপি সাংসদ, অনুপস্থিত ছিলেন। সূত্রের খবর, অন্তত দু’জন বিরোধী সাংসদ ত্রিশুর লোকসভা আসনের ফলাফলের বিষয়টিও বৈঠকে তুলে ধরেছেন, যেখানে বিজেপির সুরেশ গোপী জয়ী হয়েছেন।