অনসূয়া সেনগুপ্ত কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে, সেলফি-সইয়ের আবদার মেটালেন হাসি মুখে
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: চলতি বছর ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে ‘আন সার্টেন রিগার্ড’ বিভাগে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন কলকাতার মেয়ে অনসূয়া সেনগুপ্ত। তাঁর ‘দ্য শেমলেস’ ছবির জন্যে। এই প্রথম কান-এ কোনও ভারতীয় অভিনেত্রী এই বিভাগে পুরস্কৃত হলেন। সেই ছবিই রবিবার দুপুরে নন্দনে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হল।
‘মঞ্চে আসছে আমাদের কলকাতার মেয়ে অনসূয়া’, প্রেক্ষাগৃহজুড়ে তখন হাততালির শব্দে কান পাতা দায়! রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ অনসূয়া সেনগুপ্ত নন্দন চত্বরে এসে দাঁড়াতেই শুরু হয় ফিসফাস, ‘ওই যে, কান চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে এবার পুরস্কার পেল!’ বুঝতে অসুবিধা হয় না, ‘দ্য শেমলেস’ ছবিটি ও অনসূয়াকে ঘিরে দর্শকের উন্মাদনার পারদ তরতর করে বাড়ছে। সেলফি, সইয়ের আবদার মেটাতে মেটাতে তিনি বলছিলেন, ‘যতই বাইরে থাকি, কলকাতা আমার অত্যন্ত কাছের।’ তিনি কলকাতার মেয়ে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যলেয়ের প্রাক্তনী। অঞ্জন দত্তের ‘ম্যাডলি বাঙালি’ দিয়ে হাতেখড়ি হওয়া মেয়েটি প্রথম ভারতীয় কান পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী। ১৪ বছর পর শহরের কোনও প্রেক্ষাগৃহের পর্দায় নিজেকে দেখতে অন্যান্য দর্শকের মতো মুখিয়ে ছিলেন অনসূয়া নিজেও। ‘সত্যি একেবারে আলাদা অনুভূতি। আমি এই শহরে বড় হয়েছি, এখানে কাজ করেছি। তারপর এতদিন বাদে আবার এখানে আমার ছবি দেখানো হল। নস্টালজিক লাগছে।’
কানের সেরা অভিনেত্রী অনসূয়া হলেও ‘দ্য শেমলেস’ জুড়ে ঠাণের মেয়ে ওমারাও রয়েছেন সমানে সমানে। শিশুর মতো উচ্ছ্বাসে তিনিও বললেন, ‘‘ছবি দেখার লম্বা লাইন, দর্শকদের ভালবাসায় নিজেকেও কলকাতার মেয়ে বলেই মনে হচ্ছে।’’ দুই নারীর স্পর্ধার উড়ান বুলগেরিয়ার পরিচালক কনস্তান্তিন বোজ়ানভের ছবি ‘দ্য শেমলেস’ই কিফের রবিবাসরীয় ভোজের মেন কোর্স। কানে অনসূয়ার সাফল্যের খবর আসা ইস্তক এ ছবি দেখার জন্য মুখিয়ে ছিল কলকাতা।
মুম্বইয়ে গত অক্টোবরে মুম্বই চলচ্চিত্র উৎসব বা মামিতে মাত্র দু’টি শো-তে দেখা গিয়েছে অনসূয়াদের ছবি। তার পরেই নন্দনের এই শো। আজ, সোমবার সকাল ১১টায় নজরুলতীর্থ, কাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টেয় রাধা স্টুডিয়োতেও কানে ভারতকে গর্বিত করা অভিনেত্রীর ছবিটি দেখা যাবে। এর পরে তা কেরল, চেন্নাইয়ের উৎসবে যাওয়ার কথা। কিন্তু সাধারণ দর্শক ‘দ্য শেমলেস’ কবে দেখতে পাবেন, তা এখনও অনিশ্চিত। ফরাসি, সুইস নির্মাতাদের সঙ্গে এ ছবির অন্যতম প্রযোজক, মুম্বইবাসী মোহন নাডার বললেন, ‘‘ছবিটা এ বার সেন্সর বোর্ডে পাঠানো হবে। তার পরে দেখা যাক!’’
ছবিতে রেণুকা ওরফে অনসূয়া দাপুটে, সাহসী, তেজস্বিনী। পাকেচক্রে পেশায় যৌনকর্মী। দেবিকা ওরফে ওমারা তুলনায় মুখচোরা, শান্ত, ভিতু। ঠাকুরদেবতার ভর, কুসংস্কার ভরা সাধনার মোড়কে অনেকটা দেবদাসীদের আদলে দেবিকার মা, দিদিমারাও যৌন পেশার সঙ্গে জড়িয়ে। ‘দ্য শেমলেস’ এই দু’টি মেয়ের ভালবাসা, জীবনের প্রতি আস্থার গল্প। সমাজের নানা বাধা জয় করে অকুণ্ঠ, মুক্ত, নির্ভার হয়ে উঠতে চায় তারা।