বঙ্গ বিজেপি’কে ‘অযোগ্য’ বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: নির্বাচন থেকে সদস্য সংগ্রহ অভিযান—প্রতিবারই টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বঙ্গ বিজেপি। রাজ্যের বিধানসভা ভোটে টার্গেট ছিল ২০০ আসন। কিন্তু ৭৭’এ থেমে যায় পদ্মের জয়রথ। তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। জেতার পরপরই দল বদলেছেন অনেক এমএলএ। এমনকী সাম্প্রতিক উপ নির্বাচনে ‘গড়’ মাদারিহাট পর্যন্ত হাতছাড়া হয়েছে গেরুয়া শিবিরের। বাংলা দখলের স্বপ্ন ভঙ্গের জ্বালা আজও তাড়া করে বেড়াচ্ছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহকে। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে সদস্য সংগ্রহে এক কোটির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থতা।
আর এর ফলেই সোমবার বিজেপি ‘অযোগ্য’ বলে তোপ দাগল দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কড়া ধমকের মুখে পড়তে হল বাংলার গেরুয়া সাংসদদের। গত সপ্তাহেই এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কার্যত তুলোধোনা করেছে বাংলার বিরোধী দলনেতা সহ বিজেপি বিধায়কদের। ‘অযোগ্যদের পরেরবার কে টিকিট দেয়, দেখব!’—শুনতে হয়েছে এমন হুঁশিয়ারিও।
সোমবার দিল্লিতে বঙ্গ বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন দলের অন্যতম কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত সর্বভারতীয় নেতা সুনীল বনসল। সেখানেই কড়া ধমকের মুখে পড়তে হয়েছে শান্তনু ঠাকুর, জয়ন্ত রায়, সৌমিত্র খাঁয়ের মতো একাধিক এমপিকে। কারণ, তাঁরা কেউই ৫০ হাজারের বেশি সদস্য জোগাড় করতে পারেননি বলে রিপোর্ট।
স্বয়ং অমিত শাহ নির্দেশ দিয়েছিলেন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বাংলায় এক কোটি সদস্য সংগ্রহ করতে হবে বিজেপিকে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছনো যায়নি। উল্টে বারবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অনুরোধ করেছে বঙ্গ পার্টি, বাংলার জন্য এই সময়সীমা যেন কিছুটা বাড়ানো হয়! এদিন সেকথা বলতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বনসল। প্রশ্ন তোলেন, ‘এতদিন কী করছিলেন?’ ঠিক একই পরিস্থিতি হয়েছিল গত শুক্রবার সল্টলেকের পার্টি অফিসে বাংলায় সদস্য সংগ্রহ অভিযান নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে। বিরোধী দলনেতা সহ বিজেপি বিধায়কদলের সামনেই বোমা ফাটান ‘বুথ স্পেশালিস্ট’ বনসল। স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘মেম্বারশিপ নিয়ে কোনও বিধায়ক কাজ করছে না। নিজের এলাকায় বিধায়কদের দেখা যায় না। এই সব অযোগ্যদের পরের বার কে টিকিট দেয়, দেখব!’ তিনি সরাসরি আঙুল তুলেছিলেন আসানসোলের (দক্ষিণ) বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলের দিকে। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন মহিলা মোর্চা প্রধানকে উদ্দেশ করে বনসল বলেন, ‘আপনার বিধানসভায় সদস্য সংগ্রহের হাল অত্যন্ত খারাপ। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র ৩০ হাজার মেম্বার করার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৩ হাজার সদস্য নথিভুক্ত হয়েছে।’ দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়ে ঝাড়খণ্ডে প্রচারে ব্যস্ততার অজুহাত দেন অগ্নিমিত্রা। পাল্টা ধেয়ে আসে বনসলের তির, ‘আপনাকে ঝাড়খণ্ডে কে পাঠিয়েছিল? আমি যে তালিকা তৈরি করেছিলাম, তাতে আপনার নাম ছিল না।’
কার্যত একইরকম যুক্তি এদিনের বৈঠকেও দিয়েছেন বঙ্গ বিজেপি সাংসদরা। বলেছেন, সংসদের অধিবেশনের জন্য দিল্লিতে থাকতে হচ্ছে। তাই এই ব্যাপারে বিশেষ সময় দিতে পারছি না। এমন অদ্ভুত যুক্তি শুনে বনসল আরও চটে যান। সূত্রের খবর, তিনি বলেছেন, ‘অধিবেশন তার মতো চলবে। আপনারা এলাকায় সময় দিন। এক কোটির টার্গেট, অন্তত ৫০ লক্ষ সদস্য জোগাড় তো করুন!’