প্রাচীন ঐতিহ্য বজায় রেখে শুরু হয়েছে ঘোষগ্রামের কড়ি মেলা, উপচে পড়ছে ভিড়
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: লক্ষ্মীর গ্রাম হিসাবে পরিচিত ময়ূরেশ্বরের ঘোষগ্রাম। কথিত আছে, হর্ষবর্ধনের আমলে পরিব্রাজক সাধক কামদেব ব্রহ্মচারী পরিভ্রমণ করেছিলেন মায়ের সাধনার সন্ধানে। বীরভূমের রাঢ় অঞ্চল ঘুরতে ঘুরতে তিনি ঘোষগ্রামে এসে পৌঁছন। সেখানে তিনি স্বপ্ন দেখেন ক্রেতাযুগে রাম, লক্ষ্মণ, সীতা ও হনুমান বসবাসের জন্য কিছুদিন এই গ্রামে বিচরণ করে গিয়েছেন। আবার দুর্যোধনের চক্রান্তের শিকার হয়ে পান্ডবরা কিছুদিন এই এলাকায় অজ্ঞাতবাসে ছিলেন।
সাধনার উপযুক্ত স্থল হিসাবে এই গ্রামের একটি নিম গাছের তলাতে তিনি সাধনা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে লাগোয়া কাঁদর থেকে শ্বেতপদ্ম ও একটি কাঠের খণ্ড তুলে নিয়ে এসে গঙ্গামাটির প্রলেপ দিয়ে লক্ষ্মীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে পুজোর সূচনা করেন। সেই থেকে আরাধ্যদেবী রূপে পূজিত হয়ে আসছেন মা লক্ষ্মী। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো ও পৌষ মাসের প্রতি বৃহস্পতিবার এই মন্দিরকে ঘিরে মেলা বসে।
এবারও লক্ষ্মী মন্দিরকে ঘিরে গ্রামে বসেছে কড়ির মেলা। কয়েকশো বছর ধরে পৌষমাসের প্রতি বৃহস্পতিবার এই মেলা বসে। এদিন পৌষ মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার। বীরভূম ছাড়াও লাগোয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমান জেলা থেকেও বহু কৃষক এদিন মেলায় এসেছেন। প্রাচীনকালে বিনিময়ের মাধ্যম ছিল কড়ি, পরবর্তীতে মুদ্রা ও টাকার প্রচলন হলেও প্রাচীন ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছে ঘোষগ্রাম। এ মেলা মিলন মেলা নামেও পরিচিত।
কড়ির মেলার বৈশিষ্ট্যই আলাদা। এই মেলায় অধিকাংশ দোকানদার দুধ কড়ি, ফুল কড়ি, তিল কড়ি, বুজ কড়ি ও শ্বেত কড়ি সহ বিভিন্ন ধরনের কড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই মেলা চলে। জনশ্রুতি আছে, কড়ি মায়ের চরণে ছুঁইয়ে বাড়িতে রাখলে অভাব দুর হয়। পান্ডবেশ্বর থেকে আসা দেবী মণ্ডল, মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের অনিমেষ দে বলেন, পাঁচ বছর ধরে এই দিনটিতে নতুন ধান সহ মেলা থেকে কেনা কড়ি দিয়ে লক্ষ্মীর পুজো দিয়ে আসছি। সংসারের অভাব দুর ও পরিবারের মঙ্গল কামনাতেই এখানে আসা। কিন্তু এখানে রাত্রিবাসের কোনও ব্যবস্থা নেই। যোগাযোগেও অব্যবস্থা রয়েছে। তাই বাসনা থাকলেও সন্ধ্যারতি দেখা হয় না। তাই পুজো দিয়ে তারাপীঠ চলে যাব।