বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের ইতিহাস জানেন?

December 24, 2024 | 2 min read

কালীঘাট ট্রাম ডিপোর পাশে রসা রোড ও লাইব্রেরি রোডের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে হলুদ রঙের গির্জা, গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ। চারটে থামের উপরে ত্রিভুজাকৃতি বিরাট ইমারত দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওয়ারেন হেস্টিংসের অর্থানুকুল্যে গির্জা তৈরি হয়। সে’কথাও লেখা রয়েছে।

প্রথম গির্জা তৈরি হয় ১৭৫২ নাগাদ, কিছুদিনের মধ্যেই তা পরিত্যক্ত হয়। তারপর গির্জা তৈরি হয় আমড়াতলা ঘাট স্ট্রিটে। ১৭৭৮-তে গ্রীক ব্যবসায়ী আরগিরি এবং কলকাতার গ্রীকদের উদ্যোগে গির্জা তৈরি হয়েছিল। আমড়াতলা গির্জার পিছনে ছিল একটা কবরখানা, যা পরবর্তীকালে ফুলবাগান অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়। কবরখানায় ছিল প্রায় দু’শো কবর। ধীরে ধীরে আমড়াতলার এই অঞ্চল জনাকীর্ণ ব্যবসায়িক ক্ষেত্র হয়ে ওঠার ফলে গির্জার নিস্তব্ধতা বিঘ্নিত হয়। ১৯২৫ সালে কালীঘাট অঞ্চলে এই গির্জা স্থানান্তরিত হয়।

১৪৯৮ সালে ভাস্কো দ্য গামা ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কার করে, তারপর ইউরোপীয় বণিকদের ভারতে আসার পথ সুগম হয়। পর্তুগীজ, আর্মেনীয়, ওলন্দাজ, ফরাসি, ইংরেজ বণিকরা ভারতে পাড়ি জমালেন। সবশেষে আসেন গ্রীসের বণিকরা। কলকাতা আর ঢাকাকে বাণিজ্যকেন্দ্র হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন তাঁরা। ঢাকায় নুন আর কলকাতায় প্রধানত পাট এবং মশলার কারবার করতেন।

বাণিজ্য করতে দোভাষীর প্রয়োজন হত। সপ্তদশ শতকের শেষে কলকাতায় আগমন ঘটল প্যানাঘিওটিস অ্যালেক্সিওস আরগিরির। ধনী গ্রীক ব্যবসায়ী, আরগিরি, যিনি ক্যাপ্টেন থর্নহিল নামে অন্য একজন গ্রীক ব্যক্তির দোভাষী হিসাবে ভারতে এসেছিলেন, তিনি যীশু খ্রিস্টের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি থেকে গির্জার অর্থায়ন করেছিলেন। এটা বিশ্বাস করা হয় যে ভারতে আসার সময় তার জাহাজ মধ্য সমুদ্রে একটি ঝড়ের মুখোমুখি হয়েছিল এবং তিনি তীরে জীবিত অবতরণ করলে একটি গির্জা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঈশ্বরের কাছে জীবনের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। এভাবে কলকাতায় অবতরণের পর তিনি ওয়ারেন হেস্টিংসের কাছ থেকে এই গির্জা নির্মাণের অনুমতি নেন। তিনি ছাড়াও হেস্টিংসের কাছে আপিল পত্রে স্বাক্ষরকারী সকল স্থানীয় গ্রীক ব্যবসায়ীও এতে অবদান রাখেন। ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে আমড়াতলার গির্জার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার আগেই আরাগিরির জীবনদীপ নির্বাপিত হয়। কলকাতা শহরের গ্রীক বাসিন্দারা এগিয়ে আসেন তাঁর অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে। রেভ নিকিফোরস ছিলেন এই গ্রীক চার্চের প্রথম যাজক।

গির্জাটি ৬ আগস্ট, ১৭৮১ সাল থেকে চালু হয়। ১৯২৪ সালে, স্থানীয় গ্রীকরা তাদের আমড়াতলা গির্জা বন্ধ করে দেয় এবং কালীঘাটে চলে আসে যেখানে সাধারণ গ্রীক মন্দির শৈলীতে একটি নতুন গির্জা নির্মিত হয়েছিল। গির্জার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ৩ নভেম্বর, ১৯২৪ -এ এবং এটি ১৯ নভেম্বর, ১৯২৫-এ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এটিকে এখন গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ বলা হয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kolkata, #Church, #greek orthodox church

আরো দেখুন