বিনোদন বিভাগে ফিরে যান

চব্বিশের কোন কোন সিনেমা-সিরিজ না দেখে থাকলে বিরাট মিস!

December 31, 2024 | 5 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ২০২৪ সালের বক্স অফিসে অঙ্কের হিসেবে কেউ বছরভর রাজত্ব করেছে, আবার কেউ বা দারুণ কন্টেন্ট উপহার দিয়ে চর্চার শিরোনামে থেকেছে। বছর শেষের আগে সেগুলোর দিকে আরেকবার নজর দিয়ে নেওয়া যাক।

মাণিকবাবুর মেঘ- শহুরে ভিড়ের মাঝে একটা মেঘলা প্রেমের গল্প বলে। আশ্চর্য মনকেমন করা ছবি যা দর্শকদের স্তব্ধ করে দেয়। নিঃসঙ্গ, অন্তর্মুখী মানুষের চরিত্রে চন্দন সেন অনবদ্যয়। ছবিটা দেখার অনেকদিন পরেও রেশ থেকে যায়।

বেলাইন– দর্শক হিসেবে আমরাই অভিযোগ করি, বাংলা ছবিতে নতুন কিছু দেখতে পাই না কেন! বেশির ভাগ ছবিই একঘেয়ে লাগে কেন? তবে যখন তেমন কোনও কাজ হয়, এই দর্শকরাই সেভাবে হলমুখী হই না, কিংবা সেই ছবি প্রেক্ষাগৃহে এমন সব টাইমিং পায় যে সাধারণ দর্শক অনেক সময় চাইলেও গিয়ে উঠতে পারেন না, ফলে সেইসব লাইন থেকে বিচ্যুত ছবির ব্যবসাও মার খায়। শমীক রায়চৌধুরি পরিচালিত ছবি ‘বেলাইন’-এর হালও সেরকমই হয়েছিল। পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রেয়া ভট্টাচার্য এবং তথাগত মুখোপাধ্যা য় অভিনীত এই ছবি মূলত সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। চেনা ছকের বাইরে সাহসী গল্প বলা ছবি মাস্ট ওয়াচের তালিকায়।

এটা আমাদের গপ্পো– অভিনেত্রী মানসী সিনহা পরিচালিত পয়লা সিনেমা। আর তাতেই বর্ষীয়ান দুই মানুষের গল্প বলে বাজিমাত করেছেন মানসী। বাংলা সিনেমায় জেড জেনারেশনের প্রেম, প্রেমভঙ্গ, হতাশা, আধুনিক নাগরিক জটিলতা জড়িয়ে থাকে। কিন্তু মানসীর এই গল্পে বাংলা সিনেমার পুরনো প্রেমকাহিনি যেন ফিরে এল পুরোনো ঘরানার হাত ধরেই। শাশ্বত-অপরাজিতা জুটি অনবদ্য।

অযোগ্য- প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটির পঞ্চাশতম ছবি। চেনা ছন্দে একটু আলাদা পথে হেঁটেছেন এক্ষেত্রে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। অতীতের প্রেম, বর্তমান সংসার, রাজনীতির জট… পরিচালক সুযোগ্যভাবেই দীর্ঘ ন্যারেটিভ সামলে বড়পর্দায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শিলাজিৎকে নিয়ে এক উপন্যাসের রচনা করেছেন।
পদাতিক- ব্যক্তি মৃণাল সেন, পিতা মৃণাল সেন, স্বামী মৃণাল সেন, পরিচালক মৃণাল সেন- মানুষ মৃণাল সেনের পরিসর তো একে সীমাবদ্ধ নয়, একাধিক মৃণাল সেন! যিনি কখনও গল্প বলতে চেয়েছেন (নীল আকাশের নিচে বা বাইশে শ্রাবণ), কখনও গল্প ভাঙতে চেয়েছেন (ভুবন সোম), রাজনীতিক মৃণাল সেন (‘ইন্টারভিউ’, ‘পদাতিক’), বাঙালি মধ্যবিত্তের প্রতিনিধি মৃণাল সেন (‘একদিন প্রতিদিন’, ‘চালচিত্র’) বাস্তবকে পকেটস্থ করার মৃণাল সেন (‘আকালের সন্ধানে’, ‘মহাপৃথিবী’) বা এক সিনেমার প্রচলিত ব্যকরণ ভেঙে নতুন ভাষা তৈরির কারিগর মৃণাল সেন। সেই চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্ট করে সৃজিত মুখোপাধ্যায় বাজিমাত করেছেন। উপরি পাওনা মৃণালের ভূমিকায় চঞ্চল চৌধুরি।

চালচিত্র এখন– চব্বিশে মৃণাল সেনকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে আরেকটি চমকপ্রদ সিনেমা তৈরি করে ফেলেছেন অঞ্জন দত্ত। এক অনুরাগীর শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে সার্থক চালচিত্র এখন। পিতৃসম মৃণাল সেনের জন্মশতার্ষিকীতে পুত্রসম অঞ্জন দত্তর শুধু আন্তরিক নয়, বন্ধুত্বে, ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায়, রাজনীতির শিক্ষায়, জীর্ণ পুরাতন কলকাতাকে ঘৃণা-ভালোবাসায় বুকের কাছে আবার টেনে নিয়ে মনের সুখে গান গেয়ে উঠে তাঁর প্রতি এক সিনেমাটিক অবিচুয়ারি ‘চালচিত্র এখন’।

চালচিত্র- থ্রিলার সিনেমা ঠিক কেমন হওয়া উচিত, বছরশেষে চার চারটি সিনেমার রিলিজের মধ্যে কন্টেন্টেই বাজিমাত করে দেখালেন প্রতীম ডি গুপ্ত। টোটা-অপূর্বর দ্বৈরথ অপূর্ব! এই থ্রিলার ছবিতে শুধু খুন-জখম-রক্তের দাগ নয়, মনের প্রান্তর এফোড়-ওফোড় করে দেওয়ার মতো দৃশ্য কল্প এবং সংলাপ বর্তমান। যে লেখে, সে তো ছবি দেখতে পায়, সেই দেখা সিনেমার পর্দায় ট্রান্সফর্ম করাটা সবসময় মসৃণ হয় না। প্রতিম ডি গুপ্ত ‘চালচিত্র’ ছবিতে সেটা পেরেছেন। মাস্ট ওয়াচ ছবি।

বাদামি হায়নার কবলে- ফেলুদা, ব্যোমকেশের শহরের ত্রাতা দীপক চ্যাটার্জি! বাংলার পর্দায় গোয়েন্দাদের ভিড়ে দেবালয় ভট্টাচার্যের ‘শ্রীস্বপনকুমারের বাদামী হায়নার কবলে’ অত্যন্ত সৎ প্রচেষ্টা। এবং ব্যোমকেশ, ফেলুদার জুতোতে পা গলানো আবির চট্টোপাধ্যায়কে দীপকের চরিত্রে বেশ লাগে।


পারিয়া- পথসারমেয়দের ধরার আড়ালে মাংসের ব্যবসা! সামাজিক বার্তা দিতে সক্ষম পারিয়া। অ্যাকশনে চমৎকার বিক্রম।

ভূতপরী- ছোটদের সিনেমা তৈরি করা বড় কাজ। সেই কাজটি করে চলেছেন পরিচালক সৌকর্য ঘোষাল (Soukarya Ghosal)। ‘রেনবো জেলি’র পর ‘ভূতপরী’, আরও একবার কল্পনা-বাস্তবের লুকোচুরি খেলা। বর্তমান সময়ের লার্জার দ্যান লাইফ হিরো আর ডার্ক থ্রিলারের বাজারে বনলতা, মাখন চোর, কালো ঠাকুর, সূর্যরা বেশ সতেজ একটা দেয়। তাই জয়া আহসান অভিনীত এই ছবি কিন্তু মাস্টওয়াচের তালিকায় রাখাই যায়।

বছরভর বাংলার ওয়েব দুনিয়াতেও একাধিক সিরিজ মুক্তি পেয়েছে। তবে সেই তালিকা ঘেঁটে সালতামামিতে যেগুলো ঠাঁই পেয়েছে, তার মধ্যে পয়লা মাস্ট ওয়াচ ‘নিকষ ছায়া‘। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত গা ছমছমে ভুতুড়ে সিরিজে দারুণ দ্বৈরথ চিরঞ্জিৎ-কাঞ্চনের। অবশ্যই দেখতে হবে, কারণ বাংলার ওটিটি দুনিয়ায় ঘ্যানঘ্যানে আষাঢ়ে ভুতুড়ে গল্পের মাঝে ‘নিকষ ছায়া’ চমক।

দ্বিতীয় স্থানেই ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট‘। রানা-জাহানারার দুষ্টু-মিষ্টি, খুনসুঁটি এবং কামগন্ধে ভরপুর গল্পে সমাজ, রাজনীতির চোখ রাঙানি, ভিন্ন স্বাদের মফস্‌সলের গল্প দেখে শহুরে দর্শকরা বিস্ময়ে দেখেছেন। বলা ভালো ‘গপগপিয়ে গিলেছেন’। হইচই নিয়ে শোরগোলের মাঝে ফ্রাইডে ওটিটি অ্যাপের ‘নেক্রো‘ সিরিজটি দিব্যি গোল করে দিতে পারে। একের পর এক নারী হত্যা এবং পরে ধর্ষণ… সিরিয়াল কিলিংয়ের ধাঁচ! সেই গল্পের আরেক প্লটে মৃত মহিলার সঙ্গে সহবাস, রোমান্সে চমকে দিয়েছেন শুভাশীষ মুখোপাধ্যায়। মাস্ট মাস্ট ওয়াচ ‘নেক্রো’। বাংলার ওটিটি দুনিয়ায় এধরনের গল্প নিয়ে কাজ হয় না।

চব্বিশের আরেকটি মাস্ট ওয়াচ বাংলা সিরিজ ‘বিজয়া‘। ব়্যাগিং যে একপ্রকারের সামাজিক বিষফোঁড়া, এই সিরিজে সেই বার্তা দিয়ে যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর স্মৃতি ফিরিয়েছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। এদিকে বছরশেষে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের আরেকটি উপহার ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর‘। পরিচালকের শেষ ফেলুদা। এবং সেই চরিত্রে টোটা রায়চৌধুরির কাপ্তানি। সদ্য মুক্তি পেয়েছে, বেশি না ভাঙাই ভালো। দেখে ফেলুন ঝটপট হইচইতে। বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে তৈরি ‘যাহা বলিব সত্য বলিব‘তে মিমি চক্রবর্তী এবং টোটা রায়চৌধুরীর আইনি দ্বৈরথ মুগ্ধ করবে। ২০০৩ সালে বাপি সেন নামে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট কয়েক জন পুলিশকর্মীর মারেই নিহত হন। ২০০২ সালে বর্ষবরণের অভিশপ্ত রাতের সেই স্মৃতিতে ধুলো পড়ে গিয়েছে ঠিকই, তবে এহেন ঘটনা বারবার সিস্টেমের জং ধরা কল-কব্জার কথা বারবার মনে করিয়ে দেয়। চন্দ্রাশিস রায় এই সিরিজে সেটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন। কোর্টরুম ড্রামা নিয়ে আরেকটি ওয়েব সিরিজ না দেখলেই নয়, সেটি হল ‘অ্যাডভোকেট অচিন্ত্য আইচ‘। এই সিরিজে অচিন্ত্য ওরফে ঋত্বিক চক্রবর্তী অ্যাডভোকেট না গোয়েন্দা? ধরতে পারবেন না!

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Series, #2024, #Bengali Cinema, #Web Series

আরো দেখুন