মত্সজীবীদের চোখে জল, বাংলাদেশের জেলে অত্যাচার! গঙ্গাসাগরে বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: প্রায় ২ মাস পর বাংলাদেশের জেল থেকে ঘরে ফিরছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৯৫ মত্সজীবী। রবিবার দুদেশের জলসীমায় মত্সজীবীদের হস্তান্তর করা হয়। সোমবার গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি দেখতে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী তুলে ধরেন, বাংলাদেশে জেলবন্দি মৎস্যজীবীদের বেদনার কথা। সেই সঙ্গে মৎস্যজীবীদের হাতে তুলে দিলেন আর্থিক সাহায্য এবং কিছু উপহার।
এদিন তিনি বলেন যে, ”বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। আমরা ওদের ভালোবাসি। কিন্তু একটা পরিস্থিতি এমন হল যে চোখে জল এসে যাওয়ার মতো।” তাঁর অভিযোগ, বাংলাদেশে জেলবন্দি মৎস্যজীবীদের উপর অত্যাচার হয়েছে, যার জেরে অনেকে পা-কোমরে চোট পেয়েছেন। হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে তাঁদের। তাই জেলা প্রশাসনকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, আহত মৎস্যজীবীদের ভালোভাবে চিকিৎসা করানোর জন্য।
বাংলাদেশ ফেরত জেলেদের উদ্দেশ্য়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা যারা ফিরে এসেছেন তাদের পরিবারের মানুষদের মুখে হাসি ফুটেছে। যতক্ষণ আপনারা ফিরে না আসছিলেন, আপনাদের মুখগুলো ওদের দেখতে না পাচ্ছিল ততক্ষণ ওরা গভীর চিন্তায় ছিল। একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ছিল। আজ ওরা ফিরে এসেছেন। এবার বাড়ি ফিরে যাবেন। একজন জলে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। মারা গিয়েছেন। তার পরিবারকে আমরা ২ লাখ টাকা তুলে দিলাম। আর আমার ৯৫ জন ভাই যাদের অনেক কষ্টে আমরা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। আমি এটা জানতাম না, কয়েকজন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছেন কেন? তারা বলতে চায়নি। জানতে পারলাম তাদের কয়েকজনকে মারধরও করা হয়েছে। তাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। মোটা লাঠি দিয়ে মারা হয়েছে। ফলে কয়েকজনের শারীরিক চোট হয়েছে। জামা কাপড় পরে রয়েছে বলে বোঝা যাচ্ছিল না। ওরা কাঁদছিল বলে বুঝতে পারলাম।
গত অক্টোবর বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়ার অভিযোগে সে দেশের নৌবাহিনীর হাতে আটক হন কাকদ্বীপ, নামখানার ৬টি মাছ ধরার ট্রলার-সহ মোট ৯৬ জন মৎস্যজীবী। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ওঁদের একটি ট্রলার এখানে চলে আসে। অনেকসময় জলের মধ্যে সীমানা ঠিক করা যায় না। পথ হারিয়ে যায়। কিন্তু আমরা নিষেধ করব, কখনওই আমাদের সীমানার বাইরে যাবেন না। তাতে জীবন বাঁচবে। জীবন বেঁচে থাকলে অনেক মাছ উঠবে। এই যে দুমাস জেলে ছিলেন তাদের তাতে আপনাদের পরিবারের, আপানাদের কষ্ট হয়নি? অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি ট্রলার আমাদের এখানে চলে এসেছিল। তাদের আমরা ভালো করে রেখেছিলাম। তাদের চিকিত্সা করেছিলাম। তাদের ফেরতও দিয়েছি। দুদেশই মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ থাক আমরা চাই। ওদের ট্রলার আটকে ছিল, আমরা সাহায্য করলাম। যাতে দেশের কোনও বদনাম না হয়। আমরা বিষয়টি ভারত সরকারকে জানিয়েছিলাম। নিজেরাও কথা বলেছিলাম। রোজ আমরা খবর রাখতাম। তার পরেই দুদেশের মধ্যে একটা আদানপ্রদান হয়। বাংলাদেশের যারা ছিল তাদের আমরা হ্যান্ডওভার করে দিই। ওরাও আমাদের মত্সজীবীদের ফেরত দেয়।
মত্সজীবী প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, রাজ্যের মত্সজীবীদের জন্য একটি মত্সজীবী প্রকল্প চালু করছি। যাতে কোনও মত্সজীবীর মৃত্য়ুর পর তাতে ২ লাখ টাকা দেওয়া যায়। ইতিমধ্যেই ২০০ পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। আজও এখান থেকে একজনকে দেওয়া হল। ৬০ বছরের বেশি বয়সী মত্সজীবীকে ১ হাজার টাকা দেওয়া হবে। মত্সজীবীদের লোনের জন্য ক্রেডিট কার্ড করে দেওয়া হয়েছে।