মাঘে বাঁকুড়া জুড়ে পালিত হয় নানান মেলা, জানেন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মাঘ মাসে বাঁকুড়া জেলায় অসংখ্য মেলা হয়, পয়লা মাঘের মেলা, নাগরদোলা মেলা, টুসু মেলা, সিনি পুজোর মেলা ইত্যাদি। রয়েছে আরও মেলা।
ধানশিমলা গ্রামের ব্যাঘ্ররায়ের মেলা:
বাঁকুড়া মশাগ্রাম রেলপথে সোনামুখী থানার ধানশিমলা বিদ্যাভবন স্কুলের পাশে ফাঁকা মাঠ। মাঠের পাশে জঙ্গলে আছে ব্যাঘ্ররায়ের থান। ওই অঞ্চল ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা। জঙ্গলে ছিল বাঘের ভয়। বাঘের ভয়কে জয় করতে এলাকার লোকজন শুরু করেছিল শ্রীশ্রী বাবা ব্যাঘ্ররায়ের পুজো। ব্যাঘ্ররায়ের বাৎসরিক পুজো হয় পয়লা মাঘ। পুজোয় দুটো শুকর বলি হয়। খিচুড়ি প্রসাদ দেওয়া হয়। ব্যাঘ্ররায়ের মেলা বসে মাঘের শেষের দিকে। ২২শে মাঘ শুরু হয়ে চলে সংক্রান্তি পর্যন্ত। ৮ দিনের মেলা হয়। মেলায় মাঠের চারধারে দোকান বসে।
হাতিবাড়ি গ্রামের বলদাবুড়ি মেলা:
দুবরাজপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিমলাপাল থানার বিক্রমপুর গ্রাম থেকে দুবরাজপুর গ্রাম যেতে হাতিবাড়ি গ্রামের মোড় ছাড়িয়ে সামান্য এগোলে রাস্তার পাশে ঝোপঝাড়ের আপনার রয়েছে বলদাবুড়ির থান। বলদাবুড়ির বার্ষিক পুজো হয় ৩রা মাঘ ও ১০ই মাঘ। পুজোয় মোরগ বলি, পাঠা বলি হয়। পুজোর পর মেলা বসে, মোটামুটি পাঁচ ঘণ্টার মেলা। মেলায় প্রচুর লোকজন সমাগম হয়। বলদাবুড়ির পুজোর শুরু হয়েছে ২০০ বছরেরও আগে।
বালিঠ্যা গ্রামের বড়মায়ের ভোগ মেলা:
বালিঠ্যা গ্রামের বসন্তচণ্ডী মা ভীষণ জাগ্রত। বসন্তচণ্ডী মাতা এখানে বড়মা বলে খ্যাত। শুধু আশেপাশের গ্রাম নয় দূরদূরান্তের গ্রামের লোকেরা গবাদী পশু, বিশেষত গরুর রোগভোগ হলে বড় মায়ের নামে মানত করে। মানত করেন, বিপদমুক্তি হলে মায়ের ভোগ রান্নার জন্য কাঠ নিয়ে আসবেন। দোসরা মাঘ ভক্তরা গরুর গাড়িতে কাঠ বোঝাই করে হাজির হন মায়ের মন্দিরে। গ্রাম বাংলা থেকে গরুর গাড়ি বিদায় নিলেও বড়মায়ের ভোগ মেলাতে অসংখ্য গরুর গাড়ি দেখা যায়। যা এই মেলার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য এবং বৈচিত্র।
বড়কুরপা গ্রামের হেল্ল্যাসিনির মেলা:
বড়কুরপা গ্রামের পশ্চিম দিকে আছে মা হেল্ল্যাসিনির থান। মা হেল্ল্যাসিনির বার্ষিক পুজো দোসরা মাঘ। দুপুরে হয় পুজো, দশটির মতো ছাগ বলি হয়। খিচুড়ি ভোগ রান্না হয় এবং বিলি হয়। বিকাল তিনটে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলা বসে। মেলা দেখতে প্রচুর লোক জড়ো হয়। মেলায় প্রচুর বিভিন্ন ধরনের দোকান বসে। বড়কুরপা গ্রামে হেল্লাসিনিরা সাত বোন আছেন। যথাক্রমে হেল্লাসিনি, বাগরাসিনি, কুদরাসিনি, ক্ষ্যাপাসিনি, কুরপাসিনি, মাদনাসিনি, মনিসিনি। পয়লা মাঘ এঁরা একসাথে বাউরিদের দ্বারা পূজিত হন। পুজোয় মুরগী ও পায়রা বলি দেওয়া হয়। ১২ বছর অন্তর শূকর বলি দেওয়া হয়। দোসরা মাঘ হেল্ল্যাসিনির পুজো করেন ভূঁইয়ারা। মানতের ছাগ বলি হয়।