ভুতুড়ে ভোটার লিস্ট সাফাই করতে কমিটির গড়ে ২০২৬-এ ‘খেলা হবে’ হুঙ্কার মমতার

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ভুয়ো ভোটার তালিকা নিয়ে তুলকালাম রাজনীতি। ভোটার তালিকা সাফাই করতে নতুন কমিটি গড়লেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যান নেতাদের উপস্থিতি কমিটি গড়লেন তিনি। ভোটার তালিকায় কারচুপি ধরতে জেলায় জেলায় কোর কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, “ওই কমিটি ভোটার তালিকা নিয়ে কাজ করবে। তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে।” তিনি আরও জানান, সাত দিনের মধ্যে প্রতিটি ব্লকে কোর কমিটি গঠন করা হবে। যারা রাজ্য কমিটিকে রিপোর্ট দেবে।
এদিন বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি বলেন, “২০২৪ সালে বাংলার মানুষ আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। জোর করে ৫টি আসনে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। না-হলে ৩৪টি আসন পেতাম।” বিজেপিকে ‘গেরুয়া কমরেড’ বলে কটাক্ষ করেন তৃণমূল নেত্রী।
মমতার অভিযোগ, বাংলায় এজেন্সি পাঠিয়ে ভোটার তালিকায় কারচুপি করার চেষ্টা করছে বিজেপি। পঞ্জাব-হরিয়ানার বহু লোকের নাম বাংলার ভোটার তালিকায় ঢোকানো হয়েছে। দিল্লি থেকে এ সব করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের আশীর্বাদেই এ সব করা হচ্ছে। কর্মীদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, ভোটার তালিকা পরিষ্কার করতে হবে। তাঁর কথায়, “২০২৬ সালে আবার খেলা হবে। সেই কাজটা শুরু হবে ভোটার তালিকা পরিষ্কার করার মধ্যে দিয়ে। জেলা সভাপতিদের বলব, বুথ কর্মীদের মাঠে নামান। প্রয়োজনে নির্বাচনের কমিশনের দপ্তরে ধর্না দেব।”
তৃণমূলনেত্রী বলেন, “মহারাষ্ট্র-দিল্লিতে ওরা বিজেপির খেলা ধরতে পারেনি। বাংলায় আমরা ধরব। যোগ্য জবাব দেব। ২০২৭ থেকে ২০২৯-এর মধ্যে বিজেপি শেষ হয়ে যাবে। বিজেপির আয়ু ২-৩ বছর। ভোট এলেই ওরা ঠিক করে, কাকে জেলে ঢোকাতে হবে, কার নামে চার্জশিট দিতে হবে, কাকে চোর বলতে হবে! লজ্জা করে না! আরজি কর মামলার এখনও সমাধান করতে পারেননি।”
মমতার অভিযোগ, ‘ভূতুড়ে’ ভোটারের মাধ্যমে বাংলা দখলের খেলা করছে বিজেপি। নির্বাচন কমিশনের আশীর্বাদে এই কাজ চলছে। দলীয় নেতাদের আরও একবার সতর্কও করলেন তিনি। বলেন, “১০ দিন সময় দিচ্ছি। অনলাইনের সঙ্গে ভোটার তালিকা মেলান। ভুয়ো ভোটার খুঁজে বের করুন।
এটা হচ্ছে ইলেকশন কমিশনের আশীর্বাদে। যারা এই কাজ করেছে তাদের হাতেনাতে ধরব। কিছু বিএলআরও দায়িত্ব পালন করেনি। জেলাশাসকদেরও দায়িত্ব ছিল। কিন্তু নির্বাচন এলেই দেখি প্রশাসনকে ধমকে-চমকে, দিল্লিতে ডেকে নিজেদের মতো চালায়। এত ভয় পাওয়ার কী আছে? ওদের তো আয়ু দু’-তিন মাসের। তারপর তো আমরাই থাকব। রহস্যটা উন্মোচন করে দিলাম। এবার আপনাদের দায়িত্ব। বাংলার মানুষের কাছে অনুরোধ, নিজের ভোটার কার্ড, ভোটার তালিকা দেখে নিন। নাহলে এনআরসি, সিএএ করে বাদ দিয়ে দেবে। প্রয়োজনে বাংলায় আরও একটা জাগরণ করতে হবে। সেই জাগরণ করবেন আপনারা। বহিরাগতদের বাংলা সম্মান করে। কিন্তু বাংলা দখল করতে এলে ছেড়ে কথা বলবে না। এটা বাংলা দখলের খেলা। বাংলাকে ওরা টার্গেট করেছে কারণ ওদের বিরুদ্ধে বাংলা লড়ে। অন্যরা লড়তে পারে না। বাংলা সর্ব ধর্মে বিশ্বাস করে।”
তৃণমূলনেত্রী অভিযোগ শানিয়ে আরও বলেন, “অনলাইনে কারসাজি করে ভুয়ো ভোটারের নাম তুলে দিয়েছে। আধার কার্ড কেলেঙ্কারি করেছে ওরা। এখানকার ভোটারদের এপিক নম্বর নিয়ে বাইরের রাজ্যের ভোটারের নাম জুড়ে দিয়েছে। বাংলার ভোটের লিস্টে সব হরিয়ানার লোকের নাম। ঠিকানা, বাবার নাম সব হরিয়ানার। এই করে দিল্লি-মহারাষ্ট্রে হারিয়েছে। ওরা খেলাটা ধরতে পারেনি। আমরা ধরে ফেলেছি। ভোটার তালিকায় গুজরাট-হরিয়ানা ভর্তি। এখানে অনেক এজেন্সি পাঠায়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্রিলিয়ান্ট মাইন্ডস নামে একটি কোম্পানি আছে কোম্পানি ইন্ডিয়া ৩৬০ নামে দুটি এজেন্সি আছে। দুটো- যতদূর আমি খবর জোগার করতে পেরেছি, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর এবং কিছু বিএলআরকে নিয়ে কাজ করেছে। ভোটের আগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ভোটার লিস্ট ক্লিন করতে হবে। নাহলে এই নির্বাচনে যাওয়ার দরকার নেই।”
মমতার সংযোজন, “বাংলার সংস্কৃতি বিপন্ন। তফসিলি জাতির ভোট নিয়ে যায়, আর তারপর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে থেকে বিআর আম্বেদকরের ছবি সরিয়ে দেন। হিন্দুধর্মের অপমান করছে। ভোটের সময় মতুয়া আর ভোট মিটে গেলেই ফতুয়া! আমরা সর্বধর্ম ভালোবাসি। কোনটা করি না? বিজেপি যারা ভালো কাজ করছেন, তাদের পদোন্নতি করব। কিন্তু যারা কাজ করেন না, শুধু বিবৃতি দেন, দলের সমালোচনা করেন, বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করেন না, তাদের আমি ভালোবাসি না।”