নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চুপিসারে যখন-তখন বাড়ছে ওষুধের দাম, নাজেহাল আম জনতা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ন্যাশনাল লিস্ট অব এসেনশিয়াল মেডিসিনস অর্থাৎ অপরিহার্য ওষুধের তালিকায় থাকা মেডিসিনগুলিকে শিডিউল ড্রাগ বলা হয়। অন্যান্য ওষুধগুলিকে বলা হয় নন শিডিউল ড্রাগ। নন শিডিউল ড্রাগগুলির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সংস্থা ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইজিং অথরিটির নিয়ম, ওষুধের নির্মাতারা বছরে একবার, ১০ শতাংশ দাম বাড়াতে পারবেন। যদি না কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমোদন এনপিপিএ দ্বারা গ্রাহ্য হয়। অভিযোগ, নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছে কয়েকটি বড় ওষুধ নির্মাতা। বাজারের নিরিখে দেশের প্রথম ২০টি ওষুধ নির্মাতার তালিকায় থাকা একাধিক কোম্পানির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সামনে এসেছে। সাধারণ ক্রেতারা সমস্যায় পড়ছেন এতে। সুগার, প্রেশার, পেটের অসুখ-সহ নানা সমস্যার ওষুধ নির্ধারিত দামের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। সময়ের আগেই প্রায় ৫০০ দরকারি ওষুধের অবাঞ্ছিত দাম বেড়েছে।
লিখিত অভিযোগ দাখিল হয়েছে। কেন্দ্রীয় রসায়ন মন্ত্রকের আওতাধীন ওষুধ দপ্তরের আওতায় থাকা ওষুধের দামের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনপিপিএ-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছে ওষুধের দোকানদারদের একটি সংগঠন। অল ইন্ডিয়া কেমিস্টস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটর্স ফেডারেশনের (এআইসিডিএফ) সেক্রেটারি জয়দীপ সরকারের কথায়, অধিকাংশ মানুষই বুঝতে পারে না, কীভাবে ওষুধের দাম নিয়ে তারা নিত্য প্রতারিত হয়েই যাচ্ছে। অথচ এনপিপিএ-র নাকের ডগায় এইসব কাজকর্ম হচ্ছে। চুপিসারে কীভাবে দাম বৃদ্ধি চলছে?
ইনহেলার সহ কয়েকশো জনপ্রিয় ওষুধের নিমার্তা এক সুপরিচিত কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০২৪ সালের এপ্রিলের বদলে তারা ওষুধপত্রের দাম বাড়িয়েছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে! প্রায় ৪ মাস ধরে তারা অতিরিক্ত মুনাফা ঘরে তোলে। আবার বছরে একবার ১০ শতাংশের বদলে যা
ইচ্ছে তাই দাম বাড়ানোর অভিযোগও রয়েছে। যেমন একটি সংস্থা ২০২৫ সালের এপ্রিলের পরিবর্তে ২৪ সালের নভেম্বরে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় অ্যান্টি বায়োটিকের দাম ১০ শতাংশের বদলে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়ে ৫০ টাকার জায়গায় ৭৫ টাকা করে দিয়েছে চুপিসারে!
অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে চলছে প্রতারণা। প্রতি বছর নন শিডিউল ড্রাগের দাম ১০ শতাংশ বাড়ানোর কথা। এতদিন অবধি তা বাড়ানো হত এপ্রিলে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এপ্রিলে দাম বাড়ানোর পরও ফের নভেম্বরে কয়েকটি সংস্থা দাম বাড়িয়ে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৫-৬ মাস তারা বর্ধিত দামে ওষুধ বেচছে। এপ্রিলে এসে কেন্দ্র জানতে পারছে, এটা নতুন আর্থিক বছরের জন্য তাদের ওষুধের বর্ধিত দাম। কেন্দ্র সেই দামটা সংশ্লিষ্ট আর্থিক বছরের নতুন বর্ধিত দাম বুঝে ফার্মা সহি দামে আপলোড করে দেয়। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৫ মাস চোরাগোপ্তা বর্ধিত দামে বেচে কয়েকশো কোটি টাকার মুনাফা ঘরে তুলে ফেলছেন ওষুধ নির্মাতারা! অতি সম্প্রতি বছরে একবার যে কোনও সময় দাম বাড়ানোর সরকারি অধিকার অর্জন করেছে কোম্পানিগুলি। তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এক একটি নির্মাতা সংস্থা এক এক সময় দাম বাড়ালে আদৌ কি নজরদারি চলবে?