১০০ দিনের প্রাপ্য টাকা রাজ্যকে দেবে না, সংসদে তৃণমূল সাংসদদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ জবাব মোদীর মন্ত্রীর

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দু’বছরের উপর বাংলার ১০০ দিনের প্রাপ্য টাকা বন্ধ করে রেখেছে মোদী সরকার। ২০২২ সাল থেকে বাংলার টাকা বন্ধ। পাওনা ৫ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। সেই ১০০ দিনের কাজের টাকা মিলবে না। দুর্নীতির অজুহাত দেখিয়ে মঙ্গলবার ফের তৃণমূলকে একথা জানিয়ে দিলেন মোদীর মন্ত্রী। আর তাও সংসদে দাঁড়িয়ে। প্রশ্নোত্তর পর্বে বিষয়টি নিয়ে লোকসভায় হয়ে গেল একচোট তুলকালাম।
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের ব্যাপক বিতণ্ডা সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণকেই আরও একবার বেআব্রু করে দিল। আগে তিনিই ছিলেন গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী। এখন শিবরাজ সিং। তা সত্ত্বেও ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রাখার ইস্যুতে গিরিরাজ সিং কটাক্ষ করতেই রাগে ফেটে পড়লেন কল্যাণবাবু। এই বাগযুদ্ধের রেশ টেনেই গ্রামোন্নয়ন রাষ্ট্রমন্ত্রী কমলেশ পাসওয়ান জানিয়ে দিলেন, ‘বাংলা টাকা পাবে না। এটা মোদি সরকার। এখানে কাউকে টাকা কামাতে দেওয়া হবে না। যারাই দুর্নীতি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
র্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখে বেহাত হয়ে যাওয়া ১ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে কেন্দ্র। অর্থাৎ কেন্দ্রই স্বীকার করে নিয়েছিল, দুর্নীতি সর্বত্র হয়নি। যা নিয়ে সন্দেহ ছিল, সেই অঙ্ক উদ্ধারও হয়েছে। তাহলে তারপরও টাকা মেলেনি কেন? তৃণমূল সাফ জানিয়েছে, ৭৬টি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল এসেছে রাজ্যে। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই রাজ্য যথাযথ উত্তর দিয়েছে। এমনকী, জব কার্ড সংক্রান্ত যাবতীয় ত্রুটি সংশোধন করে তার অ্যাকশন টেকেন রিপোর্টও দাখিল করা হয়েছে কেন্দ্রে। শুধু ১৩ হাজার ৩৭৩ জন শ্রমিকের থেকে ২ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা উদ্ধার বাকি। সেই প্রক্রিয়া চলছে। তা সত্ত্বেও গোঁ ধরে রেখেছে মোদী সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন, কয়েকজনের দুর্নীতির সাজা গোটা বাংলাকে কেন দেওয়া হবে? পুরো বিষয়টাই রাজনৈতিক। এদিন প্রশ্নোত্তর পর্বে সেই সুর টেনেই কল্যাণবাবু বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমরা নারেগার বকেয়া মেটানোর দাবি করে আসছি। কিন্তু টাকা দেওয়া হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, ২৫ লক্ষ কার্ডে জালিয়াতি হয়েছে। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে কেন দোষীদের গ্রেপ্তার করছে না কেন্দ্র? আমরাও চাই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু ২৫ লক্ষের জন্য কেন ১০ কোটিকে ভুগতে হবে? কবে মেটাবেন বকেয়া?’
এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার কথা গ্রামোন্নয়নমন্ত্রীর। সভায় হাজিরও ছিলেন শিবরাজ সিং চৌহান। কিন্তু তিনি জবাব দেননি। পরিবর্তে ব্যাটন ধরেছেন রাষ্ট্রমন্ত্রী কমলেশ পাসওয়ান। স্রেফ জবাবই দেননি, কল্যাণকে কটাক্ষও করেছেন। বলেন, ‘গত ছ’ মাস ধরে দেখছি ওঁর একটাই প্রশ্ন। কেন বাংলার টাকা আটকে? হবে নাই বা কেন? কেন্দ্রীয় টিম বাংলায় গিয়ে দেখেছে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদলে দেওয়া হয়েছে। একই টেন্ডারকে তিনটি ভাগে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় টিমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। আর সেই কেন্দ্রীয় টিমের রিপোর্ট দেওয়ার পরেই টাকা আটকেছি আমরা।’ ততক্ষণে অবশ্য কল্যাণের সঙ্গে গিরিরাজের বিতণ্ডা চরমে পৌঁছে যায়।