জনগননা হয়নি, বিকশিত ভারত নিয়ে ঘুম উড়ছে মোদী সরকারের

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: এবছরও দেশে দশকভিত্তিক জনগণনা হবে না। কারণ, এবারের বাজেটে সংশ্লিষ্ট খাতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বরাদ্দ করেছেন মাত্র ৫৭৪.৮০ কোটি টাকা। আর এত কম টাকায় দেশজুড়ে জনগণনার কাজ চালানো অসম্ভব।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্থির করা হয়েছিল, ২০২১ সালে জনগণনা বা আদমশুমারি করা হবে। তার জন্য খরচ ধরা হয়েছিল – ৮,৭৫৪.২৩ কোটি টাকা।
একইসঙ্গে, ওই বৈঠকে স্থির করা হয়েছিল, দ্রুততার সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনপিআর) আপডেট করা হবে। যার জন্য খরচ ধরা হয়েছিল আরও ৩,৯৪১.৩৫ কোটি টাকা। সেই অনুসারে স্থির করা হয়েছিল, ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্য়ে দেশজুড়ে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী আপডেট করার কাজ সেরে ফেলা হবে। কিন্তু, কোভিড অতিমারির জেরে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত সেই কাজ হয়নি। স্থগিত হয়ে পড়ে রয়েছে জনগণনার কাজও।
ফলে আগামী ২২ বছরের মধ্যে কোন তথ্যের ভিত্তিতে হবে নরেন্দ্র মোদীর ‘বিকশিত ভারত’, ভেবে মাথায় হাত নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের। ২০১১ সালের জনগণনার নথিতেই তাই এখনও চলছে পরিকল্পনা। সেই সংখ্যার ভিত্তিতেই মন্ত্রকের অনুমান, ২০৪৭ সালে দেশের জনসংখ্যা হবে ১৭৫ কোটি। এর মধ্যে শহরে বাস করবে ৮৭ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ শহুরে বাসিন্দাদের জন্য আদৌ কি রয়েছে প্রকৃত পরিকাঠামো? জবাব হাতড়ে বেড়াচ্ছে খোদ নগরোন্নয়ন মন্ত্রকই।
শহরে কত লোক গৃহহীন অবস্থায় জীবন কাটায়? ‘সকলের মাথায় ছাদ’ প্রকল্পে কত লোকের জন্য তৈরি করতে হবে বাড়ি? তার হিসেব কেন্দ্রের কাছে নেই। মন্ত্রকের সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের হিসাব মোতাবেক, ৯ লক্ষ ৩৮ হাজার ৩৪৮ জনের গৃহহীন। কিন্তু এই সংখ্যা যে বর্তমানে বদলেছে, তা বলাই বাহুল্য। তাই সঠিক তথ্য ছাড়া বিকশিত ভারত গড়া সরকারের সামনে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মন্ত্রকের অন্দরে এ নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা।
মন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে বলা হয়েছে, দ্রুত গতিতে বাড়ছে নগরায়ন। দেশের ৫৩টি শহরে ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস করে। যদিও এটিও সেই ২০১১ সালের জনগণনার তথ্য। ফলে এটি এখন আরও বেড়ে গিয়েছে। তাই ফিজিক্যাল, ইনস্টিটিউশনাল, সোশ্যাল এবং ইকনমিক গ্রোথ প্রয়োজন। তার জন্য দরকার বেসিক আরবান সার্ভিসেস। অর্থাৎ সেই বিজলি-পানি-সড়ক। গৃহহীনদের বাড়ি। তবে সরকারকে ভাবাচ্ছে জলের বিষয়টিও।
জলের উৎস বাড়াতে পুকুর, ঝিল, কুয়ো বাড়ানো হবে বলে ঠিক হয়েছে। পানীয় জলের ক্ষেত্রে বোতলের জল বা ট্যাঙ্কার ব্যবস্থার বদলে সরাসরি নলের জল সরবরাহ। সে শহর হোক বা গ্রাম। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ড্রিঙ্ক ফ্রম ট্যাপ।’ শহরে দূষণমুক্ত নর্দমার লক্ষ্যে নেওয়া হচ্ছে কর্মসূচি, ‘ব্ল্যাক টু ব্লু।’ যেখানে কালো জলের নর্দমার চেহারা বদলে দিতে চায় মোদি সরকার। লক্ষ্য যে, বিকশিত ভারত। কিন্তু নগরায়নের প্রকৃত তথ্য কই? মাথায় হাত মোদী সরকারের।