Repo Rate কমানোই সার, মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানোর কোনও দিশা নেই

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বুধবার নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে আবার ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ফেব্রুয়ারি মাসের পর আরও একবার। এর ফলে রেপো রেট হতে চলেছে ৬ শতাংশ। অর্থাৎ, ব্যাঙ্কঋণের উপর ধার্য হওয়া সুদের চাপ কিছুটা লাঘব হবে। আয়করের নয়া কাঠামোয় কোনও সুবিধা না মিললেও ইএমআইয়ের ক্ষেত্রে খানিক স্বস্তি মেলার কথা। কিন্তু এতে কি মূল্যবৃদ্ধির ফাঁস আলগা হবে? দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে? গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা নিজেই জানিয়েছেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি সম্পূর্ণ অনিশ্চিত।’
রান্নার গ্যাসের দাম এক ধাক্কায় সিলিন্ডার পিছু ৫০ টাকা বেড়ে গেল, ৭৫০টি ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হল, মূল্যবৃদ্ধির আঁচে শহুরে ক্রয় প্রবণতা কমল। আর এই সবই নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে স্বীকার করে নিয়েছে আরবিআই। অথচ এরপরও গভর্নর দাবি করলেন, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে! রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নীতি নির্ধারণ কমিটি নাকি মনে করে, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নাকি একধাক্কায় কমে গিয়ে সাধারণ মানুষের নাগালে এসে গিয়েছে! দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গে অবশ্য সাধারণ মানুষ এই দাবির কোনও সামঞ্জস্য পাচ্ছে না। কমিটির পূর্বাভাস, চলতি অর্থবর্ষে মূল্যবৃদ্ধি হার হতে চলেছে ৪ শতাংশ। এই পূর্বাভাস করা হলেও এই হার যে বজায় থাকবেই, সেই নিশ্চয়তা অবশ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দেয়নি। তাদের সরকারি বক্তব্য, আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম অনেকটাই কমেছে। পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের জোগান বেড়েছে অনেকটাই। সেই কারণেই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে যে অনিশ্চয়তা চলছে, তার জেরে এই হার কতদিন থাকবে, সেটা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানে না। আর তাই দাবির আড়ালে ‘ফাঁক’ রেখে নীতি নির্ধারণ কমিটি জানিয়েছে, মূল্যবৃদ্ধিও অনিশ্চিত।
একটা বিষয়ে যদিও কোনও সংশয় নেই—প্রাক্তন গভর্নর এবং বর্তমান গভর্নরের নেতৃত্বে হওয়া নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে অগ্রাধিকার সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। শক্তিকান্ত দাসের সঙ্গে মোদী সরকারের রীতিমতো বাদানুবাদও হয়েছে। কারণ তাঁর আমলে নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠকের প্রধান অগ্রাধিকার ছিল মূল্যবৃদ্ধি। নতুন নীতির ক্ষেত্রে প্রধান মানদণ্ড ছিল সেটাই। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হওয়া সঞ্জয় মালহোত্রা মোদি সরকারের বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রকের ‘মনের মতো’ অবস্থান গ্রহণ করেছেন। বিগত কয়েকটি নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে দেখা গিয়েছে, মালহোত্রা মূল্যবৃদ্ধিকে সেভাবে গুরুত্ব দিতে নারাজ। মোদি সরকারের মতোই তাঁর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ শুল্ক-যুদ্ধ। এর কাছে মূল্যবৃদ্ধি কিছুই নয়। তবে মোদি সরকার স্বীকার না করলেও গভর্নর স্বীকার করেছেন যে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ হওয়ায় রপ্তানি বাণিজ্য বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনকী ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হারও কমতে চলেছে। বুধবারের বৈঠকে চলতি আর্থিক বছরের জিডিপি বৃদ্ধিহারের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে ৬.৫ শতাংশ। সেটাই ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল ৬.৭ শতাংশ। ২০২৪ সাল জুড়ে কিন্তু দেশের অর্থমন্ত্রক অথবা রিজার্ভ ব্যাঙ্কও ৭ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ জিডিপির অনেক গালভরা ঘোষণা করেছিল। এখন সাড়ে ৬ শতাংশের উপর কেউ আর উচ্চবাচ্য করছে না।