পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প চিরতরে বন্ধ রাখা যায় না, কেন্দ্রকে দুষে জানাল হাইকোর্ট

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বৃহস্পতিবার মোদী সরকারকে কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল যে পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প চিরতরে বন্ধ রাখা যায় না। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ, এ রাজ্যে ফের কবে থেকে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প শুরু করা যাবে, সেই প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রের কাছ থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট তলব করেছে।
খেতমজুর সমিতি জনস্বার্থ মামলা করে ১০০ দিনের কাজের টাকা বকেয়া সহ একাধিক ইস্যুতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। এরপর এই প্রকল্প ঘিরে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। তা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল হাইকোর্ট। এদিন সেই কমিটির নোডাল অফিসার রিপোর্ট দিয়ে জানান, মোট চারটি জেলা থেকে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিল। সেখান থেকে মোট ২ কোটি ৩৯ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে রাজ্য। রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় কেন্দ্রীয় দল তদন্ত করতে রাজ্যে এসেছিল। তাদের অভিযোগ ছিল, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, মালদহ এবং দার্জিলিংয়ে এই প্রকল্পে ৫ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বঞ্চিত করে ওই টাকা গিয়েছে অন্য ব্যক্তিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
হাইকোর্ট গঠিত কমিটির এই রিপোর্ট দেখার পরই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘উদ্ধার হওয়া অর্থ এখন প্রকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে বণ্টনে অসুবিধা কোথায়? কেন্দ্র কেন এব্যাপারে পদক্ষেপ করছে না?’ উত্তরে কেন্দ্রের আইনজীবী জানান, এই অর্থ রাজ্য সরকার উদ্ধার করেছে। এখন তা রাজ্যের কোষাগারেই রয়েছে। এরপরই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মোট চারটি জেলা থেকে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিল। তা হলে রাজ্যের বাকি জেলাগুলিতে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে অসুবিধা কোথায়? এরাজ্যে এই প্রকল্পের কাজ চিরতরে বন্ধ থাকতে পারে না।’ পরে তাঁর আরও সংযোজন, দুর্নীতির আশঙ্কা করলে শুধুমাত্র এরাজ্যের জন্য কেন্দ্র পৃথক পদক্ষেপ করতে পারে। প্রয়োজনে প্রকল্পের কাজে সরাসরি নজরদারি করুক তারা। পশ্চিমবঙ্গে সেকাজের জন্য একজন বিশেষ অফিসারও কেন্দ্র নিযুক্ত করতে পারে। কিন্তু এভাবে প্রকল্পের কাজ চিরতরে বন্ধ রাখা যায় না। যেসব জেলায় দুর্নীতির অভিযোগ নেই সেখানে কেন প্রকল্পের কাজ শুরু হবে না? সেই প্রশ্নও তোলেন প্রধান বিচারপতি।
এরপরই ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশে জানায়, ইতিমধ্যেই চারটি জেলা থেকে যে অর্থ উদ্ধার হয়েছে, তা কীভাবে কোন পদ্ধতিতে প্রকৃত জব কার্ড হোল্ডারদের মধ্যে বণ্টন করা যাবে সেব্যাপারে রিপোর্ট দিতে হবে কেন্দ্রকে। সেইসঙ্গে এই চার জেলা বাদে রাজ্যের অন্যত্র কত দিনের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে তাও উল্লেখ করতে হবে। ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই তদন্তের আবেদন করা হয়েছিল। সেই বিষয়টি পরে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। ২০২২ সাল থেকে এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে রাজ্যে। তাই কেন জব কার্ড হোল্ডারদের বেকার ভাতা দেওয়া হবে না? পরবর্তী শুনানির দিন সেই প্রশ্নের জবাব দিতে রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে বেঞ্চ। ১৫ মে মামলার পরবর্তী শুনানি।