দেশের শীর্ষ আদালতকে বেনজির আক্রমণ ধনখড়ের, তাঁর এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ প্রকাশ বিরোধীদেরা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট তামিলনাড়ু সরকারের দায়ের করা মামলার রায়ে বলে, বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্যপালেরা, এমনকী রাষ্ট্রপতিও অনাদিকাল ফেলে রাখতে পারেন না। একই মামলার রায়ে এই ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির জন্যও সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে সম্মতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তিন মাস সময় পাবেন রাষ্ট্রপতি। কোনও কারণে তিনমাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে ফাইলে উপযুক্ত কারণ উল্লেখ করতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। রাষ্ট্রপতি ভবন রাজ্য সরকারকেও কারণ জানাতে বাধ্য থাকবে।
এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টকে তোপ দেগে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, সংবিধানের ১৪২তম অনুচ্ছেদে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ ক্ষমতা ‘পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র’-র সমান হয়ে উঠেছে। উপরাষ্ট্রপতি প্রশ্ন তুলেছিলেন, রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার কি সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে?
এরপরই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, উপরাষ্ট্রপতির মতো আলঙ্কারিক পদে বসে থাকা ব্যক্তি, যাঁর রাজ্যসভা পরিচালনা ছাড়া আর কোনও কাজ নেই, তাঁর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রশ্ন তোলার কী এক্তিয়ার রয়েছে? জগদীপ ধনখড় ব্যক্তিগত ভাবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সমালোচনা করতেই পারেন। কিন্তু সরকারের দিক থেকে সমালোচনা করতে হলে কোনও মন্ত্রী বা সরকারি আইনজীবীর তা করা উচিত। সরকারের নীতি, রাজনীতি ও আদালতের রায়ের ক্ষেত্রে উপরাষ্ট্রপতির কোনও ভূমিকাই নেই।
কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে, সিপিএম থেকে শুরু করে সমস্ত বিরোধী দলের নেতারা আজ উপরাষ্ট্রপতির মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী সলমন খুরশিদ বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় চূড়ান্ত। তাতে কোনও আপত্তি থাকলে পর্যালোচনার জন্য আবেদন করা যায়। কিন্তু সেই রায় পক্ষে না গেলেও তা মানতে হবে।’’
তৃণমূল সাংসদ, আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘উপরাষ্ট্রপতির মন্তব্য খুবই আপত্তিজনক। প্রায় আদালত অবমাননার কাছাকাছি। সাংবিধানিক পদে আসীন ব্যক্তি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সম্মান করবেন, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি লাগাতার সুপ্রিম কোর্টকে অসম্মান করছেন। এটা খুবই উদ্বেগজনক প্রবণতা।’’
সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিব্বাল তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘কারা দেশের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খর্ব করছে? তাঁর অধিকার বা কারা খর্ব করছে?’ এই বর্ষীয়ান আইনজীবী বলেন, ‘ওঁর মন্তব্যে আমি অত্যন্ত দুঃখ পেয়েছি। আমার মনে হয় যখন বিচারব্যবস্থার সিদ্ধান্ত যখন সরকারের পছন্দ হয় না তখনই এমন অভিযোগ করা হয়। যখন তাঁদের পক্ষে সিদ্ধান্ত যায়, তখন সব ঠিক থাকে। যেমন রামমন্দির ও অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে ঘটেছিল।’ এর পরেই তিনি ১৯৭৫–এ দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রসঙ্গ তোলেন। তাঁর সাফ কথা, ‘দু’জনও নন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণ আইয়ারের রায়ে ইন্দিরা গান্ধী তাঁর সাংসদ পদ হারান। সরে যেতে হয় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে। সেই ঘটনাকে তো কেউ সুপার পার্লামেন্ট বলে কখনও মন্তব্য করেননি। তা হলে এখন কেন ধনখড়জি এ কথা বলছেন?’
তাঁর উদ্দেশে সিব্বাল বলেন, ‘যখন রাষ্ট্রপতি কোনও সিদ্ধান্ত নেন তা ইউনিয়ন ক্যাবিনেটের পরামর্শ মতো নেন। কারণ সংবিধান বলছে তিনি নামমাত্র প্রধান। একই ভাবে রাজ্যপালের কাছে বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল যায়। সংবিধান রাজ্যপালকে অধিকার দিয়েছে সেই বিল ফেরত পাঠানোর। তবে তা দ্বিতীয়বার তাঁর কাছে এলে তিনি স্বাক্ষর করতে বাধ্য। রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, এটা মাননীয় ধনকড় মহাশয়ের জানা উচিত।’