‘আজ সুব্রত নেই, ভাবতেই পারছি না’ বিধানসভায় কেঁদে ফেললেন শোভনদেব
বন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কালীপুজোর রাতে প্রয়াত হয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সোমবার বিধানসভার অধিবেশনে আলোচনা হচ্ছিল তাঁকে নিয়েও। প্রায় দেড় ঘণ্টার আলোচনায় অংশ নিলেন তৃণমূল থেকে বিজেপি-র বিধায়করা। সেখানেই বন্ধুকে নিয়ে বলতে বলতে এক সময় চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী। বললেন, ‘‘সেই ১৯৬৭ সাল থেকে ওঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। তারপর ছাত্র আন্দোলন থেকে পথ চলতে চলতে এতগুলো বছর কেটেছে। কত ঝগড়া করেছি, তার হিসাব নেই। আবার কত নিবিড় বন্ধুত্বও ছিল। আজ যে সুব্রত নেই, ভাবতেই পারছি না।’’ এরপরেই বিধানসভা অধিবেশন কক্ষেই কেঁদে ফেললেন তিনি।
সুব্রতর প্রয়াণে শেষ হয়ে গিয়েছে বাংলার রাজনীতির একটি বড় অধ্যায়। সেই প্রজন্মের রাজনীতিক হিসেবে এখনও সক্রিয় শোভনদেব। সেই সূত্র ধরেই শোভনদেব বলেছেন, ‘‘পুজোর আগেই শেষ ক্যাবিনেট বৈঠক হল বিধানসভায়। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে আমার ঘরে এল সুব্রত। বলল তোর সঙ্গে একা আডডা দিতে চাই। ঘর খালি করে দেওয়া হল। সবাই চলে যেতেই বলল, এখন তো আমার সমবয়সী বলতে তুই। তোকেই সব বলতে পারি। এ সব কথা তো আর ছন্দবাণীকেও বলা যায় না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বালিগঞ্জে যখন প্রথম ভোটে দাঁড়াল সুব্রত। তখন সুপ্রিয়ার (শোভনদেবের স্ত্রী ) বাড়ির ঠিকানা দিয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিল। ওঁর পৈতে আমাকে বানিয়ে দিতে হত। এমন একজন বন্ধুকে হারানো যে কতটা দুঃখের, তা বলে বোঝানো যাবে না।’’
৩০ অক্টোবর খড়দহ উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন শোভনদেব। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণেই বন্ধুর হয়ে প্রচারে যেতে পারেননি সুব্রত। তাই কিছুটা হলেও অক্ষেপ রয়ে গিয়েছে শোভনদেবের। বন্ধু সুব্রত গুড় খেতে বড় ভালোবাসতেন। যুবাবস্থায় বাসি মুখেই নলেন গুড় খেতেন। বারণ করলেও পাত্তা দিতেন না ডাকাবুকো নেতা। খড়দহ উপনির্বাচনে জয়ের পর ভেবেছিলেন বন্ধুকে তাঁর প্রিয় নলেন গুড় খাওয়াবেন। কিন্তু, বন্ধুর আকস্মিক মৃত্যুতে সে ইচ্ছে অপূর্ণই রয়ে গেল শোভনদেবের।
স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে গলা ধরে এল শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার। বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীও নিজের স্মৃতি তুলে ধরলেন। শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘আমার এবং আমার পরিবারের সম্পর্ক ছিল। অনেক ছোট বয়সে আমি তাঁকে দেখেছি। মেদিনীপুরের বাড়িতে তিনি শতাধিকবার এসেছেন, থেকেছেন। তাঁর সঙ্গে রাজনীতির বাইরে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। রাজনীতির মত আলাদা হলেও কোনও দিন সেই সম্পর্কে প্রভাব পড়েনি। বাংলার রাজনীতিতে সুব্রত মুখ্যপাধ্যায় প্রাসঙ্গিক থাকবেন।’’