মুখ্যমন্ত্রীর কথার বাস্তবায়ন, ‘চপ শিল্পে’-ই সংসারের হাল ফেরালেন এমএ পাশ যুবক
কটাক্ষ নয়। বিরোধীদের তালে তাল মিলিয়ে নয় কুৎসাও। বরং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখের কথাকে বাস্তবায়িত করে দেখালেন পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের এক যুবক। চপ ভেজেই ফি দিন ৫০০ টাকা হাতে । ঠেলাগাড়ির দোকানের নাম ‘চপ শিল্প’। যাতে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত তেলেভাজা ভেজে প্রতিদিন প্রায় দু’হাজার টাকার রোজগার বিশ্বজিৎ কর মোদকের।
কিছুদিন আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল ‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’র খবর। স্নাতকোত্তর হয়েও চা বিক্রি করে নজর কাড়েন হাবড়ার টুকটুকি দাস। পরে তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তাঁকে সাহায্যের আশ্বাসও দেন। এবার নজরে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের ভিলেজ রিসোর্স পার্সেন বিশ্বজিৎ কর মোদক। জঙ্গলমহল বান্দোয়ান গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই তিনি ভিলেজ রিসোর্স পার্সেন পদে পতঙ্গ বাহিত রোগ দমন করার জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ান। আর সেই ফাঁকে ‘চপ শিল্পে’র দোকান খুলে বাড়তি রোজগার করছেন বিশ্বজিৎ।
বান্দোয়ান ফরেস্ট অফিস মোড়ে এই ঠেলা গাড়ির দোকান দিয়েছেন তিনি। দুপুরটুকু বাদে সকাল-সন্ধ্যা তার ঠেলায় তেলেভাজা খেতে ভিড় জমছে ভালই। সেই সঙ্গে ব্যানারে যেভাবে বড় বড় করে লেখা ‘চপ শিল্প’ তাতেও যেন আলাদা চোখ টেনে নিয়েছে দোকানটি। মাত্র সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যেই তেলেভাজা ভেজে বান্দোয়ানের বাজার ধরে নিয়েছেন বিশ্বজিৎ। তবে এই অবস্থায় পৌঁছানোর জন্য তাকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি।
স্নাতকোত্তর, টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বিশ্বজিৎ। ২০১৬ সাল থেকে ভিলেজ রিসোর্স পার্সেনের সাথে যুক্ত তিনি। তখন বছরে ১৩ দিনের এই কাজ করলে ৪৮০ টাকা পেতেন। ২০১৭ থেকে ২০১৮ র প্রায় শেষ পর্যন্ত এই কাজ বন্ধ ছিল। তারপর চলতি বছরের শেষের দিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে হওয়া এই ভিলেজ রিসোর্স পার্সেনদের পতঙ্গ বাহিত রোগ দমনের কাজে যোগ দেন। প্রতিদিনের বেতন দেড়শো টাকা। ২০২০ সাল নাগাদ বেতন আরও ২৫ টাকা বেড়ে যায়। এখন প্রতিদিন ১৭৫ টাকার গড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ভাতা পান বিশ্বজিৎ।
কিন্তু গত জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মাসিক ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুজোতে খুবই সমস্যায় পড়েন তিনি। সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে ঠোঙা বানিয়ে সারা দিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা রোজগার করতেন। সেই টাকাতেই কোনওভাবে সংসার চলত তাঁদের। এদিকে ভিলেজ রিসোর্স পার্সেনের ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসারে কোনও অর্থ দিতে পারেননি তিনি। যার জেরে পরিবার তাকে ত্যাজ্যপুত্র করে বলে অভিযোগ।
কিছুদিন আগে অবশ্য সেই চার মাসের বকেয়া ভাতা হাতে পান ওই যুবক। এরপরই নিজের জমানো টাকা দিয়ে পুরানো ঠেলা গাড়ি কিনে সপ্তাহ দু’য়েক আগে ‘চপ শিল্পে’র দোকান খোলেন। তাঁর কথায়, “সরকারি প্রকল্পে লেখা থাকে দিদির অনুপ্রেরণায়। আমি বাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে বলছি দিদির অনুপ্রেরণাতেই তেলেভাজার দোকান করে প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে আয় করছি। চপ ভাজাটাও একটা শিল্প। এই ক্ষুদ্র শিল্পের মাধ্যমে আর সংসারে অভাব নেই। সংসারে এখন স্বচ্ছলতা এসেছে। তাই বিরোধীরা যতই কুৎসা করুন। দিদি যে সাধারণ কথা বলেছেন তা যে কতখানি বাস্তব তা নিজেকে দিয়ে প্রমাণ পেয়েছি।”
এই ‘চপ শিল্পে’র দোকানে কী নেই? সকালে মুড়ি, ঘুগনি, ডিম সেদ্ধ, ডিমের ওমলেট। বিকালে মাংসের ঘুগনি, আলুর চপ, ব্রেড চপ, ডিমের চপ, মাংসের চপ সেই সঙ্গে আবার ফুচকা। ফি দিন ১৫০ টাকায় একজন লোক রেখে তার কাজের মধ্যেই ‘চপ শিল্পে’র কাজ করে যাচ্ছেন জঙ্গলমহলের বিশ্বজিৎ।