লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জমি ‘অনলাইন নিলাম’-এর পথে মোদী সরকার
লাভজনক সরকারি সংস্থাকে বিক্রি করা। রুগ্ণ সংস্থা বন্ধ করে দেওয়া। এই রুটিনের সঙ্গে এবার যুক্ত হচ্ছে, সরকারি সংস্থার পড়ে থাকা জমি বিক্রি করে দেওয়ার প্রক্রিয়াও। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে নিয়ে মোদী সরকারের আচরণ অবিকল প্রাচীন জমিদার বংশের উত্তসূরিদের মনোভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অর্থাৎ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির শ্রীবৃদ্ধির প্রয়াস নয়, বরং সেগুলিকে বিক্রি করে আয় করো। মোদী সরকার লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে বিক্রি করে দেওয়ার প্রক্রিয়া আগেই শুরু করেছে। তালিকা দীর্ঘ। রুগ্ন সংস্থা আর টেনে নিয়ে যাওয়া হবে না বলেই স্থির হয়েছে। হয় সেগুলিকে অন্য সংস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। এবার এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জমি বিক্রিও।
জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অব্যবহৃত জমি বিক্রির লক্ষ্যে হবে ই-বিডিং প্রক্রিয়া। অর্থাৎ অনলাইন নিলামও। এভাবে ৬০০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রাথমিকভাবে স্থির করা হয়েছে। বিএসএনএল, শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া, এমটিএনএল, বিইএমএল ইত্যাদি সংস্থার পরিত্যক্ত জমিকেই আপাতত চিহ্নিত করা হচ্ছে। এই জমি বিক্রির প্রক্রিয়ার পাশাপাশি নতুন করে সরকারি সংস্থার বিলগ্নিকরণ তালিকাও তৈরি হচ্ছে। অর্থমন্ত্রকের অধীনে থাকা ডিপার্টমেন্ট অফ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট (ডিআইপিএম) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগেই। এবার সেই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হতে চলেছে। কোন কোন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জমি নিয়ে আইনি জটিলতা অথবা মামলা নেই তার তালিকাও করা হয়েছে। সেগুলিকে আগে বিক্রি করা হবে অনলাইন টেন্ডারের মাধ্যমে।
প্রসঙ্গত শুধুই কেন্দ্রীয় সরকার নয়। মোদী সরকার চাইছে একইভাবে রাজ্যগুলিও আয়ের পথ প্রশস্ত করুক। সরকারি সংস্থা এবং সরকারি জমি বিক্রিয় করা হোক। পাশাপাশি আরও ৪৬টি সরকারি সংস্থার মধ্যে থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছে বিলগ্নিকরণের। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে রাজ্যগুলিকে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপলাইনের সঙ্গে রাজ্যগুলিও যুক্ত হোক। তারাও যদি সরকারি সংস্থা কিংবা জমি বিক্রি করে, তাহলে কেন্দ্র থেকে বিশেষ উৎসাহ ভাতা পাওয়া যাবে। একইসঙ্গে অতিরিক্ত ঋণগ্রহণের সুবিধাও দেওয়া হবে। তবে অন্য একটি ইস্যু কেন্দ্রকে এই সূত্রেই যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলছে। অন্ধ্রপ্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নিজেদের রাজ্যে থাকা জমি ফেরৎ চেয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার কারখানা কিংবা প্রকল্প নির্মাণে রাজ্যের তরফে জমির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এরপর সেই প্রকল্প যদি না হয় কিংবা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সেগুলির জমি আবার রাজ্যকে ফেরৎ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে বেশ কিছু রাজ্য।