অরুণাচলে নির্মিত আরও এক চীনা গ্রামের ছবি ধরা পড়ল উপগ্রহ চিত্রে
ভারতে ফের চিনা আগ্রাসন৷ অরুণাচল প্রদেশে ফের আরও একটি চীনা গ্রামের হদিশ মিলল উপগ্রহ চিত্রে। ৬০ টি বাড়ি নিয়ে তৈরি গ্রামটি। এই গ্রামটি আগের চীনের তৈরি গ্রামের ৯৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। ২০১৯ সালেই এই গ্রামের কোন অস্তিত্ব ছিল না।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে অরুণাচলে চীনের অন্য একটি গ্রাম গড়ার খবর সামনে এনেছিল সংবাদমাধ্যমগুলি। কিছুদিন আগেই পেন্টাগন রিপোর্ট সে খবর নিশ্চিত করেছে। পেন্টাগনের প্রশাসনির রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে৷ এই তথ্যের ভিত্তিতে আবারও ভারত-চিনের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আমেরিকার জো বাইডেন সরকার৷
পেন্টাগনের প্রতিরক্ষা দপ্তরের বার্ষিক রিপোর্টে চীনের সামরিক প্রস্তুতি ও ভূমি আগ্রাসন নিয়ে বিস্তারিত তথ্য পেশ করা হয়েছে৷ তাতে, অরুণাচলপ্রদেশে চীনের গ্রাম তৈরির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তিব্বতের কিছু অংশও দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে জমা দেওয়া পেন্টাগনের রিপোর্টে বলা হয়, এলএসি পেরিয়ে অরুণাচলের ভিতরে ঢুকে এসেছে চীন। সেখানে মিগিতুন শহরের কাছে, সারি নদী বরাবর আস্ত গ্রাম গড়ে তুলেছে তারা। যাতায়াতের জন্য নদী বরাবর পাকা রাস্তাও তৈরি করা হয়েছে। সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা থেকে লোক এনে বসবাসও করাচ্ছে। প্রায় ১০০-র বেশি বাড়ি, এমনকি বহুতলও গড়ে তোলা হয়েছে ওই গ্রামে।
আর এই নতুন গ্রামটি তৈরি করা হয়েছে ৬ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে। লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল পেরিয়ে ভারতীয় সীমানায়। ভারতীয় সেনা বাহিনীর থেকে যদিও এবিষয়ে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
কয়েকদিন আগে অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং সেক্টরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার অত্যন্ত কাছাকাছি চলে আসে লাল ফৌজের একটি বাহিনী। তবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা তাদের আটকে দেয়। মুখোমুখি চলে আসে দুই দেশের ফৌজ। ক্রমে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। শুরু হয় বাকবিতণ্ডা, যা ধাক্কাধাক্কি পর্যন্ত গড়ায়।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, অরুণাচল প্রদেশে সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে চীনের গ্রাম তৈরি নিয়ে পেন্টাগনের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরে যথেষ্ট দিশেহারা দেখাচ্ছে কেন্দ্রকে। গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে একই দিনে সম্পূর্ণ দু’রকম বিবৃতি দিয়েছে বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় গত দেড় বছর যখন ড্রাগনের লাল চোখ রীতি মতো কোণঠাসা করে রেখেছে ভারতকে, তখন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এই চাপ সার্বিক ভাবে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে মোদী সরকারের।
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগেই চীন-পাকিস্তান, জাতীয়তাবাদ এবং সীমান্ত নিয়ে নানা রকম হুঙ্কার দেওয়ার কৌশল নেন মোদী। তা সে লোকসভা ভোট হোক বা গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচন। উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগেও সেই অঙ্কেই ‘তালিবান’ অস্ত্রের ব্যবহার শুরু করে দিয়েছেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। কিন্তু ভোটের মুখে আমেরিকার অরুণাচল সংক্রান্ত রিপোর্ট এবং তাকে ঘিরে সরকারের ঘোল খাওয়ার বিষয়টি মোদী তথা বিজেপি সরকারের সেই ‘বিক্রমে’ জল ঢালছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি সাংবাদিক সম্মেলনে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী কার্যত স্বীকার করে নেন, অরুণাচলের সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে চীনের গ্রাম গড়ার সত্যতা। একধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, “অতীতেও বহু বছর ধরে সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে চীন নির্মাণ কাজ চালিয়ে গিয়েছে। তারা বেআইনি ভাবে দশকের পর দশক এলাকা দখল করে রেখেছে। ভারত কখনওই নিজেদের ভূখণ্ডে এই বেআইনি দখলদারি মেনে নেয়নি, অথবা কখনই চিনের অযৌক্তিক দাবিকে মান্যতা দেয়নি।” ওই একই দিনে ‘চিফ অব ডিফেম্স স্টাফ’ বিপিন রাওয়ত আমেরিকার রিপোর্টটিই ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘চীন আমাদের এলাকায় ঢুকে পড়ে নতুন গ্রাম বানিয়েছে — এমন কিছুই সত্যি নয়।’
এই নিয়ে এখন বিরোধীদের আক্রমণের সামনে নাকানি চোবানি খেতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে।