টক টু কেএমসি থেকে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে সরাসরি যোগাযোগ,সাফল্যের হাতিয়ার তৃণমূলের
৮৭ টি সেশন। প্রায় ২২০০ ফোন কল। নথিভুক্ত অভিযোগের সংখ্যা প্রায় ১৪০০। গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ‘টক টু মেয়র’ বা ‘টক টু কেএমসি’ কর্মসূচির সাফল্য তুলে ধরতে এই পরিসংখ্যান সামনে আনছেন কলকাতার পুরকর্তারা। ফোনের ওপারে খোদ মহানাগরিক। তিনি সরাসরি মানুষের সমস্যা শুনে সমাধানের পথ বাতলে দিচ্ছেন, ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সক্রিয় হচ্ছে পুর প্রশাসন—এমনটা অনেকেই কয়েকবছর আগেও ভাবতে পারতেন না। কারও পানীয় জলের সমস্যা তো কারও বাড়ির সামনে জমছে আবর্জনা। কেউ প্রতিবেশীর অবৈধ নির্মাণে জেরবার তো কোনও প্রাক্তন পুরকর্মীর পেনশন চালু হচ্ছে না। এরকম হাজারো সমস্যা ও অভিযোগ জানানোর এক নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে ‘টক টু কেএমসি’। পাশাপশি পুরসভা চালু করেছে হোয়াটসঅ্যাপে টিকাকরণের বুকিং, জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র প্রদান, ই-ফাইলিং। সব মিলিয়ে উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গতি পেয়েছে পুর পরিষেবা। জনগণের সঙ্গে এই যে সরাসরি যোগাযোগ, সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের তৎপরতা, এসবই আসন্ন পুরভোটে তৃণমূলের প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার হতে চলেছে। ফের ক্ষমতায় এলে এসব পরিষেবার আরও বিস্তার ঘটানোই তাদের লক্ষ্য বলে জানাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ফিরহাদ হাকিম। ৮ আগস্ট, ২০১৯ থেকে চালু হয় ‘টক টু মেয়র’। সপ্তাহে একদিন নির্দিষ্ট সময়ে টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করে সমস্যা জানাতে শুরু করেন শহরবাসীরা। ফোন ‘রিসিভ’ করেন খোদ মেয়রই। প্রথমের দিকে বুধবার দুপুরে এই অনুষ্ঠান শুরু হলেও পরে তা শনিবার করে দেওয়া হয়। একাধিকবার সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু তাতে এই অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তায় কোনও ভাটা পড়েনি। পুরবোর্ডের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর প্রশাসক বোর্ড গঠন হলে অনুষ্ঠানের নাম বদলে ‘টক টু কেএমসি’ করা হয়।
পদস্থ এক পুরকর্তা বলেন, মানুষ সমস্যা জানাতে পারছেন। কিন্তু তারপরও সমাধান না হলে উল্টে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তাই সমাধানের ব্যাপারেও আমরা শুরু থেকে তৎপর ছিলাম। কারও ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড চাই, কেউ রেশন কার্ড নিয়ে ঝামেলায় পড়েছেন—পুরসভার সঙ্গে সসাসরি সম্পৃক্ত নয়, এরকম নানা সমস্যাও মানুষ মহানাগরিক ও পরবর্তীকালে পুর-প্রশাসককে জানিয়েছেন। সেসব ক্ষেত্রেও যতটা সম্ভব সহযোগিতা করা হয়েছে বলে দাবি তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের। এমনকী, সমাধান হয়ে গেলে পুরসভা ও মেয়রকে ধন্যবাদ জানাতে শোনা গিয়েছে বহু নাগরিককে। শুধু কি তাই? সুদূর বর্ধমান থেকে আশঙ্কাজনক রোগীকে কলকাতায় ভর্তি করানোর ব্যবস্থাও হয়েছে এই অনুষ্ঠানে একটা ফোন করেই।
পুর পরিষেবায় আরেক সংযোজন ‘হোয়াটসঅ্যাপ বট’। যেখানে নাম নথিভুক্ত করে নির্দিষ্ট সময়ে এসে নাগরিকরা করোনার টিকা নিয়েছেন। এভাবে ভিড় বা বিশৃঙ্খলা এড়ানো গিয়েছে। সম্প্রতি জন্ম এবং মৃত্যুর শংসাপত্রের আবেদনের জন্যও চালু হয়েছে ‘হোয়াটসঅ্যাপ বট’। এতে অনেক দ্রুত মিলছে পরিষেবা। আবার সেই হোয়াটসঅ্যাপ (৮৩৩৫৯৯৯১১১) নম্বরের মাধ্যমে নানাবিধ সমস্যা নিয়ে সরাসরি পুর-কমিশনারের সঙ্গেও সাক্ষাতের সময় মিলছে। বিল্ডিং বিভাগে চালু হয়েছে ‘ওয়ান উইন্ডো সিস্টেম’। বাড়ি তৈরির অনুমতি মিলছে মাত্র ২৭ দিনেই। মাউসের কয়েকটি ক্লিকে সহজ হয়েছে ব্যবসার লাইসেন্সপ্রাপ্তি। এসব উদ্যোগ ও কর্মসূচির সুফল তুলে ধরা, আগামীদিনে ফের ক্ষমতায় এলে এই সকল পরিষেবাকে আরও বিস্তারিত ও নিবিড় করে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েই পুরভোটের ময়দানে ঝাঁপাচ্ছে জোড়াফুল শিবির।