সিকি-শতাব্দী পার ‘অপারেশন সানশাইন’-এর
গয়না, জামাকাপড়, ব্যাগের ভিড়ে হারিয়ে যায় চলার পথ। মোটা প্লাস্টিকের ছাউনিতে সেখানে ঢাকা পড়ে আকাশ। ভিড়ের মধ্যেই ক্রেতাদের ধাক্কাধাক্কি। কলকাতার রাজপথে এই দৃশ্য খুবই সাধারণ। কিন্তু রাষ্ট্রের তরফে চেষ্টা হয়েছিল এই দৃশ্যপট বদলের। গায়ের জোরে উপড়ে ফেলা হয়েছিল দোকানপাট। সালটা ছিল ১৯৯৬। ২৪ নভেম্বরের রাতে হাতিবাগান-গড়িয়াহাটের ফুটপাথে চলেছিল বুলডোজার, পে-লোডার। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ফুটপাথের ধারের সব দোকানের কাঠামো। কলকাতার ইতিহাসে যা ‘অপারেশন সানশাইন’ নামে পরিচিত। ২৫ বছর পূর্তি হল সেই কালো অধ্যায়ের।
হাতিবাগান হোক বা গড়িয়াহাট। প্রায় গোটা চত্বর জুড়েই সেখানে রকমারি জিনিসের বিকিকিনি। ফুটপাথ আর রাস্তা দখলের ছবিটা ধর্মতলা চত্বরেও এক। যে যেমন পেরেছেন, বসে পড়েছেন ফুটপাথ আগলে। ‘অপারেশন সানশাইন’-এর আগেও যেমন চলছিল, তার পরেও তেমনই চলছে। ফুটপাথ-বাজারের আরও এক প্রাণকেন্দ্র গড়িয়াহাট। এই বাজারে ‘অপারেশন সানশাইন’ ছিল তখন খবরের শিরোনামে। সেখানেও ১৯৯৬ সালে চলেছিল অভিযান। ভেঙে ফেলা হয়েছিল সব। এক দিনে সুনসান হয়ে গিয়েছিল গড়িয়াহাটের ফুটপাথ। তবে হকারেরা দমে যাননি। বর্তমানে ফের চওড়া ফুটপাথের উপরে সার দিয়ে পসরা নিয়ে হাজির তাঁরা।
হার-দুল-ব্যাগ-জুতোর ভিড়ে ঢাকা পড়েছে ফুটপাথের অধিকাংশটাই। ‘অপারেশন সানশাইন’-এর পরে এক মাসব্যাপী হকারদের মিছিল, মিটিং চলেছিল। পাশে ছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক মাস ধরে মানব বন্ধনের কায়দায় পুলিশ ব্যারিকেড করা হয়েছিল সে সময়ে, মনে করালেন সংগ্রাম কমিটির সহ-সভাপতি অভিজিৎ সাহা। রোজগার ছিনিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে রাজনৈতিক বিতর্ক সে সময়ে গড়িয়েছিল অনেক দূর। কিছু বিতর্ক টিঁকে আছে আজও।
‘অপারেশন সানশাইনে’-এর সময়ে বড় ভূমিকায় থাকা তৎকালীন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট) কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মত, শহরটা হকারমুক্ত করা ওই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল না। যদিও, সিপিএমের গা-জোয়ারির কারণে শেষ পর্যন্ত করা যায়নি কিছুই। ২০০০ সালে সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেয়র হওয়ার পরে বদলে যায় পরিস্থিতি। শহরের হকার-চিত্র ফিরে আসে একই উদ্যমে।