কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

করোনা-আম্পানের জোড়া ধাক্কায় ম্লান খুশির ঈদ

May 25, 2020 | 2 min read

করোনা সংক্রমণ, লকডাউনের জেরে বহু পরিবার পরিজনের থেকে বিচ্ছিন্ন। গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে এসেছে উম্পুন। অনেক জায়গায় উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে মাথার ছাদটুকুও। এমন পরিস্থিতিতে তাই আজ ফিকে খুশির ঈদের জৌলুস।

বাবার সঙ্গে নতুন জামা পরে ঈদের নমাজ পড়তে যাওয়ার প্রথা এ বারই ভাঙতে চলেছে মীরের। তাঁর কথায়, ‘চারিদিকে যা পরিস্থিতি তাতে উৎসবের অনুভূতিই হচ্ছে না। সব ঠিক থাকলে দুর্গাপুজোয় উৎসবের উদযাপন হবে।’ সরিফুল মল্লিক নামে এক তরুণ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এ বার তো ঈদে আনন্দ করতে পাব না, তবে পুজোয় আনন্দ করব একসঙ্গে।’ মহম্মদ আলম লিখেছেন, ‘এ বারের ঈদের নমাজটা তোলা থাকল, অষ্টমীর দিন অঞ্জলির পর পড়ব।’

খুশির ঈদে জনশূন্য দিল্লির জামা মসজিদ

রাজ্যের টার্শিয়ারি কোভিড হাসপাতাল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার কাজি গোসাস সালামের দায়িত্ব করোনা রোগী ভর্তির বিষয়টি তদারকি করার। ৩০ দিন টানা রোজা রেখেছেন কাজে ফাঁকি না দিয়েই। রোজা ভেঙেছেনও হাসপাতালের ব্যস্ততার মধ্যে। বলেন, ‘সঙ্গে একটা খেজুর রাখতাম। ভালো করে হাত ধুয়ে জল দিয়ে, ওই খেজুর খেয়েই রোজা ভেঙেছি রোজ।’

রোজা পালন করলেও ঈদ সে ভাবে পালন করবেন না তিনি। পরিবারে নতুন জামাও কেনা হয়নি। বললেন, ‘চারদিকে যা পরিস্থিতি তাতে উৎসব পালনের ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছে। তা ছাড়া লকডাউনের আগে স্ত্রী আর দু’বছর সাত মাসের ছেলে সরফরাজকে মুর্শিদাবাদে শ্বশুরবাড়িতে রেখে এসেছিলাম। পরিবার অসম্পূর্ণ থাকলে উৎসবে কি আনন্দ থাকে?’

ঈদটাকে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে নয়, উৎসবের মতো পালন করেন সাহিত্যিক আবুল বাশার। কিন্তু এ বছরটা আলাদা একেবারেই। করোনা আর লকডাউন রমজানের জৌলুস ফিকে করেছিল আগেই, যেটুকু উৎসাহ বাকি ছিল তা-ও উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে উম্পুন। বাশারের কথায়, ‘খুব বেশি হলে বাড়িতে একটু মিষ্টি তৈরি করা হবে। উৎসব মানে সামাজিক মেলামেশা। এ বার করোনার কারণে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের কারণে সেই মেলামেশা সম্ভব নয়। আর্থিক সঙ্কট, ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে সব ওলটপালটই হয়ে গিয়েছে।’

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বাণী ইসরাইলের কথায়, ‘ঈদে আমাদের এলাকায় সবার বাড়িতে খাসির মাংস পৌঁছে দেওয়া হয়। এ বছর কিচ্ছু হচ্ছে না। নতুন পোশাক নেই, আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবের যাওয়া আসা নেই। খুশির ঈদে খুশির পরিবেশটাই নেই।’

মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছাটাকে অবশ্য টলাতে পারেনি করোনার প্রকোপ আর উম্পুনের তাণ্ডব। বারুইপুরে পৈতৃক বাড়িতে অন্য বছর সব পরিজন একজোট হন। কিন্তু এ বছর সে উপায় নেই ফুটবলার মেহতাব হোসেনের। বলেন, ‘গরিবরা খেতে পাচ্ছেন না। কত মানুষের মাথা থেকে ছাদ উড়ে গিয়েছে, এমন অবস্থায় খুশির উৎসব কী ভাবে পালন করি বলুন তো? আমি বা পরিবারের কেউই নতুন জামা কিনিনি। সে টাকা দিয়ে ঈদের দিন ধর্ম নির্বিশেষে গরিব মানুষদের খাওয়াব। তার পর বারুইপুরে একবার যাওয়ার চেষ্টা করব মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে।’

অ্যাপোলো হাসপাতালের কার্ডিয়াক ইলেক্ট্রোফিজিওলজিস্ট আফতাব খান রমজান মাস জুড়ে দান করেছেন ধর্মীয় নিয়ম মেনে। ঈদ মিটলেও দানের সে অভ্যাস না ছাড়ার পণ করেছেন এ বার। বলেন, ‘আমাদের মাথায় ছাদটা আছে, সেটা আমাদের বড় সৌভাগ্য। যাঁদের মাথায় ছাদ নেই, তাঁদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি রমজানের সময়। সেই কাজটা ঈদের পরে যতদিন সামর্থ আছে চালিয়ে যাব।’

এ দিকে উম্পুনের জেরে শহরজুড়ে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। মেটিয়াবুরুজ, গার্ডেনরিচ, খিদিরপুর, পার্ক সার্কাসের কিছু এলাকা রবিবার রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন ছিল। নানা এলাকায় জমে জল। রয়েছে পানীয় জলের সমস্যাও।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Eid, #Eid Ul Fitr, #Happy Eid, #Coronavirus, #Lockdown, #amphan

আরো দেখুন