এবার রাজ্যে জানুয়ারিতেই খুলতে চলেছে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর ক্লাস
দীর্ঘ প্রতীক্ষার শেষে ব্ল্যাকবোর্ডের মুখ দেখবে কচিকাঁচারা। জানুয়ারি থেকেই খুলে যেতে চলেছে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের পঠনপাঠন। এমনই খবর মিলছে শিক্ষাদপ্তরের অন্দরে। সব ঠিক থাকলে প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসও চালু করে দেওয়া যেতে পারে। সেই লক্ষ্যে এগচ্ছে শিক্ষাদপ্তর। রাজ্যের মিড ডে মিল প্রকল্পের অধিকর্তা (এসপিডি) ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুলগুলিকে রান্না করা খাবার বিলির উপযুক্ত করে তোলার নির্দেশ দেওয়ায় এই জল্পনা আরও জোরালো হচ্ছে।
জেলাশাসক, পুর কমিশনার সহ বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের কাছে এসপিডির সেই চিঠি এসে পৌঁছেছে মঙ্গলবারই। সেই চিঠিতে গুগল ফর্মে একটি চেকলিস্ট চাওয়া হচ্ছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুলের স্যানিটাইজেশন শেষ করে ফেলতে হবে। মিল রান্নার ঘর তথা ভাঁড়ার ঘর প্রস্তুত করা, বাসনপত্র ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা, ডাইনিং হল, পানীয় জলের ব্যবস্থাকে উপযোগী করে তোলার চূড়ান্ত সময়সীমা ওই দিন পর্যন্তই ধার্য হয়েছে। ওই একই সময়ে শৌচাগার, হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও ব্যবহারযোগ্য করে ফেলতে হবে। ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে এলপিজি সংযোগ, চালের জোগান এবং রাঁধুনি ও সহকারীদের অ্যাপ্রন, গ্লাভস। তৈরি রাখতে হবে চাল মজুতের ব্যবস্থাও। মিড ডে মিলের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের টিকাকরণও সেরে ফেলতে হবে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এর আগে ধাপে ধাপে স্কুল খোলার কথা জানিয়েছিলেন। তবে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহল থেকেই অন্তত ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল খুলে দেওয়ার দাবি জোরালো হয়েছে। পরিকাঠামো অব্যবহৃত থাকছে, শিক্ষকরাও বসে থাকছেন—এই যুক্তি দেখিয়ে ইতিমধ্যেই শহর এবং জেলার বেশ কিছু স্কুল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নির্দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করছে। স্কুলগুলি প্রতিদিনই নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস করাচ্ছে। সেই তালিকায় যেমন রয়েছে কলকাতার কৈলাস বিদ্যামন্দির, তেমনই আছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঝাপবেড়িয়া হাইস্কুল বা পূর্ব মেদিনীপুরের চাঠরা কুঞ্জরানি বাণীভবনের নাম। কৈলাস বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক তথা এসটিইএর সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, ‘অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রশাসনকেও জানানো আছে। আমরা চাই, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্তও স্কুল খুলে দেওয়া হোক। এই দাবিতে সরকারকে চিঠি দিয়েছি।’ ঝাপবেড়িয়া হাইস্কুলের শিক্ষক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘পড়ুয়াদের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ, সেটা না হলে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হবে না।’ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এরকম ক্লাস নেওয়ার কোনও খবর আমার কাছে নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
তমলুকের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক তিমিরবরণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘ডিসেম্বরে দশম শ্রেণির টেস্ট হয়ে যাবে। দ্বাদশ শ্রেণিও উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতিতে মনোনিবেশ করবে। এই অবস্থায় প্রাক-করোনা পর্বেই তারা স্কুলে আসত না। এখন যে আরওই আসবে না, সেটা নিশ্চিত। তাই দ্রুত নিচু ক্লাসের পঠনপাঠন শুরু করা ছাড়া উপায় নেই।’ অ্যাডভান্সড সোসাইটি অব হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস-এর সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল খুলে দেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ নেই। এই সিদ্ধান্ত নিলেই একসঙ্গে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।’