ডিজিটাল ভারতে উঠে যাবে ব্যাঙ্কের সব শাখা! মোদীর ঘোষণায় কর্মী সঙ্কোচনের আশঙ্কা

মোদীর ডিজিটাল ভারত নতুন এক আশঙ্কার জন্ম দিতে চলেছে। একদিকে প্রযুক্তির সঙ্গে দূর-দূরান্ত সম্পর্ক না থাকা আম জনতার ভোগান্তি, আর অন্যদিকে ব্যাঙ্কগুলির কর্মী সঙ্কোচন। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের মধ্যেই আরও একবার সিঁদুরে মেঘ।

December 4, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

ব্যাঙ্ক হবে ডিজিটাল। অর্থাৎ কোনও শাখা থাকবে না। এমন দিনও আসছে। আর তার কারিগর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার নরেন্দ্র মোদী নিজেই জানিয়েছেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে সব লেনদেন হবে ডিজিটাল মাধ্যমে। ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ ডিজিটাল ব্যাঙ্কের পথে হাঁটছে ভারত। আর আগামী দিনে এটাই হবে স্বাভাবিক একটা চিত্র।’ মোদী বলেছেন, ফিনান্সিয়াল টেকনোলজিকে এমন এক হাই প্রোফাইল আধুনিকতায় পৌঁছে দিতে হবে, যা অর্থনীতিতে নতুন বিপ্লব আনবে। অর্থাৎ, মোদীর ডিজিটাল ভারত নতুন এক আশঙ্কার জন্ম দিতে চলেছে। একদিকে প্রযুক্তির সঙ্গে দূর-দূরান্ত সম্পর্ক না থাকা আম জনতার ভোগান্তি, আর অন্যদিকে ব্যাঙ্কগুলির কর্মী সঙ্কোচন। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের মধ্যেই আরও একবার সিঁদুরে মেঘ।

২০১৬ সালে ৫০০ এবং হাজার টাকার নোট বাতিলের নায়ক নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার ইনফিনিটি ফোরামের একটি সম্মেলনে নোটহীন ডিজিটাল অর্থনীতির জয়গান গেয়েছেন। জানিয়েছেন, গত বছর এক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। গোটা দেশে এটিএম থেকে যত টাকা তোলা হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি আর্থিক লেনদেন হয়েছে মোবাইলের মাধ্যমে। অর্থাৎ অনলাইনে। সুতরাং আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে নোটকে টপকে গিয়েছে ডিজিটাল পেমেন্ট। মোদীর কথায়, আর্থিক লেনদেনের এক দীর্ঘ বিবর্তন দেখেছে ভারত। শুরু হয়েছিল পণ্যের আদানপ্রদান থেকে। এরপর ধাতু, তারপর কয়েন এবং শেষে নোট। চেক থেকে আর্থিক লেনদেন বদলে গিয়েছে কার্ডে। এই লম্বা জার্নির সাফল্যের নবতম উদাহরণ হতে চলেছে ডিজিটাল ব্যাঙ্ক। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ডিজিটাল ব্যাঙ্ক আজ বাস্তব। এটাই হবে আগামী দিনের স্বাভাবিক একটি চিত্র। অর্থাৎ কোনও ফিজিক্যাল ব্যাঙ্ক শাখা থাকবে না। ব্যাঙ্ক হবে ডিজিটাল। যে কোনও আর্থিক লেনদেন হবে ডিজিটাল মাধ্যমে। এভাবে মোদী বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, ভবিষ্যতে কোনও ব্যাঙ্ক শাখায় যাওয়ার প্রয়োজনই পড়বে না! কারণ ব্যাঙ্ক শাখা বলেই আর কিছু থাকবে না। সবই হবে ডিজিটাল।

প্রশ্ন উঠছে এই সম্ভাবনার বাস্তবায়ন নিয়ে। এখনও ১৩৫ কোটি ভারতবাসীর মধ্যে কতজন নিত্যদিনের প্রতিটি কেনাকাটা বা আর্থিক লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে করে? ডিজিটাল মাধ্যমের জন্য সবার আগে কী দরকার? ইন্টারনেট ডেটা। সেটা ভারতের সর্বত্র আজও সহজলভ্য নয়। বয়স্ক ও দরিদ্র—এই দুই শ্রেণি সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়ে অনলাইন পেমেন্টে। ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় বিপুল সংখ্যার মানুষই অবসরপ্রাপ্ত ও প্রবীণ প্রজন্মের। তাঁদের পক্ষে ব্যাঙ্কের সম্পূর্ণ ডিজিটাল পরিষেবার সঙ্গে আদৌ কি মানিয়ে নেওয়া সম্ভব? একইসঙ্গে ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণ নিয়ে আন্দোলনে নামা অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক কর্মী ও অফিসারদের সংগঠনের আশঙ্কা, শাখাহীন ব্যাঙ্কের বাস্তবায়নে সবার আগে হবে কর্মী সঙ্কোচন। প্রতিটি কাজই যদি ডিজিটাল মাধ্যমে হয়, তাহলে আর শাখায় পর্যাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মীর প্রয়োজনই হবে না। অর্থাৎ আগামী দিনে ব্যাঙ্কিং সেক্টরের চাকরির সুযোগও কমবে।

শুক্রবার এই সম্মেলনে গরিবের জন্য জনধন অ্যাকাউন্টের সাফল্যকে মোদী তুলে ধরেছেন কৃতিত্ব হিসেবে। গত সাত বছরে ৪৩ কোটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে এবং ৬৯ কোটি রুপে কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। একদিকে মোদী চাইছেন ডিজিটাল ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা। আর তাঁর চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় ডিজিটাল কারেন্সির। প্রস্তুতিপর্ব প্রায় শেষ।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen