অনাহার-নাশকতা অতীত, আমলাশোলে তৈরি হচ্ছে হোম স্টে

পাহাড় ঘেরা আমলাশোলের কেন্দগড়ায় কাল, রবিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হচ্ছে ‘ধিতাং’ নামে ওই গ্রামীণ হোম স্টে। খচলা পাহাড়ের কোলে তিনটি কটেজের প্রতিটিতে ৫ জন করে থাকতে পারবেন।

December 4, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

২০০৪। অনাহারে পাঁচ আদিবাসীর মৃত্যুতে শিরোনামে উঠে এসেছিল বেলপাহাড়ির আমলাশোল। পরে মাওবাদী সন্ত্রাসের ভিত্তিভূমি কাঁকড়াঝোর লাগোয়া এই গ্রামে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারতেন না পর্যটকেরা।

১৭ বছরে সেই আমলাশোলই আমূল বদলেছে। অনাহারের মৃত্যুর পরে উন্নয়নের দাবিতে প্রশাসনে দরবার চালিয়ে যাওয়া গ্রামের আদিবাসী যুবক লক্ষ্মীকান্ত মুড়ার বাড়ির চত্বরেই তৈরি হচ্ছে পর্যটকদের জন্য হোম স্টে। পাহাড় ঘেরা আমলাশোলের কেন্দগড়ায় কাল, রবিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হচ্ছে ‘ধিতাং’ নামে ওই গ্রামীণ হোম স্টে। খচলা পাহাড়ের কোলে তিনটি কটেজের প্রতিটিতে ৫ জন করে থাকতে পারবেন।

লক্ষ্মীকান্তের বয়স এখন ৪৬। তাঁর তিন বিঘে জমিতেই হাওড়ার দুই দম্পতির বিনিয়োগে গড়ে তোলা হয়েছে তিনটি কটেজ, কিচেন, কিচেন গার্ডেন, জৈব খামার। রাজমিস্ত্রি থেকে শ্রমিক— সকলেই গ্রামের বাসিন্দা। হোম স্টে চালাবেন লক্ষ্মীকান্ত ও তাঁর স্ত্রী জয়ন্তী। সহযোগিতায় রয়েছেন স্থানীয় আদিবাসীরা। জৈব খামারের টাটকা আনাজ, স্থানীয় জমিতে চাষ করা ধানের চাল, দিশি মুরগি দিয়ে পর্যটকদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকছে। দিনে চার বেলা খাবার-সহ মাথা পিছু খরচ ১৫০০ টাকা। আমলাশোল থেকে ২৪ কিমি দূরে ঘাটশিলা। পর্যটকরা চাইলে সেখানেও বেড়িয়ে আসতে পারবেন।

হাওড়ার মন্দিরতলার বাসিন্দা পেশায় কর-বিষয়ক আইনজীবী অয়ন ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী পেশায় ইন্টিরিয়র ডিজ়াইনার মধুরিমা ভট্টাচার্য গত ফেব্রুয়ারিতে বিবাহবার্ষিকী পালনে কাঁকড়াঝোরের একটি হোম স্টে-তে উঠেছিলেন। সঙ্গে এসেছিলেন অয়নের বন্ধু-দম্পতি হাওড়ার মন্দিরতলারই বাসিন্দা একটি বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্মী অভিলাষ দত্ত ও তাঁর স্ত্রী বেসরকারি সংস্থার কর্মী সায়ন্তনী দত্ত। মধুরিমা জানালেন, গাড়িতে আমলাশোল এসে পাহাড়-প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হন তাঁরা। আলাপ হয় লক্ষ্মীকান্তের সঙ্গে। হোম স্টে-র ভাবনাটা খেলে যায়। প্রস্তাব লুফে নেন লক্ষ্মীকান্তও। আদিবাসীদের জমি অ-আদিবাসীরা কিনতে পারেন না। তাই লক্ষ্মীকান্তের জমি ৩৫ বছরের জন্য লিজ় নিয়েছেন দুই দম্পতি। মধুরিমা ও সায়ন্তনী বলছেন, ‘‘শুধু লাভের জন্য বিনিয়োগ করিনি। হোম স্টে-র মাধ্যমে স্থানীয় আদিবাসীদের কাজ দিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে কিছুটা স্বনির্ভর করতেই এই উদ্যোগ।’’

প্রতি বছর লিজ়ের টাকা পাবেন লক্ষ্মীকান্ত। পর্যটক পিছু পরিষেবা দেওয়ার টাকাও পাবেন। স্থানীয় আদিবাসীদের থেকে আনাজ, ডিম, মুরগি কেনা হবে। হোম স্টে চত্বর সাফ থেকে বাগান পরিচর্যা— সবই করছেন স্থানীয় শবর ও আদিবাসীরা।

উন্নয়ন আর শান্তির ছোঁয়ায় এই দিনবদলে খুশি আমলাশোল। ২০০৪ সালে অনাহারে মৃত শম্ভু শবরের পুত্রবধূ পার্বতী শবর বলছিলেন, ‘‘আগের পরিস্থিতি আর নেই। গ্রামে পাকা রাস্তা হয়েছে। বিদ্যুৎ এসেছে। নিয়মিত ‘দুয়ারে রেশন’ মিলছে। হোম স্টে-তে দৈনিক মজুরিতে কাজও করছি।’’ স্থানীয় রোহনী শবর, ধনমণি শবর, মঙ্গলি শবর, রেণুকা মুড়ারাও শ্রমিকের কাজ করছেন। তবে লক্ষ্মীকান্ত জানালেন, আমলাশোল ফুটবল মাঠ থেকে কেন্দগোড়া যাওয়ার কাঁচা রাস্তাটি বেহাল। পর্যটকদের স্বার্থে রাস্তা ঢালাই করতে প্রশাসনে দরবার করেছেন তিনি। বেলপাহাড়ি বিডিও বরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আম‌লাশোলের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় এই প্রথম পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা খুবই আশাপ্রদ। রাস্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen