পুর এলাকায় জল-বিদ্যুৎ ফিরছে, যুদ্ধের গতিতে গ্রামাঞ্চলে কাজ, জানাল রাজ্য
আম্পান বিধ্বস্ত রাজ্য দ্রুত স্বাভাবিক হচ্ছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চালিয়ে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বিদ্যুৎ, জল-সহ অন্যান্য পরিষেবা। মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানালেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রামাঞ্চলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পুনর্গঠনের কাজ করছেন কর্মীরা। চলছে ত্রাণ বণ্টনের কাজও। প্রশাসনের হিসেবে আম্পানের তাণ্ডবে রাজ্যের মোট ১০৩টি পুর এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুরোপুরি বা আংশিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তার মধ্যে ৯৪টি পুর এলাকার বেশির ভাগ জায়গাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ ফিরেছে বলে এ দিন জানান স্বরাষ্ট্র সচিব।
আম্পান এর দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, কলকাতা-হাওড়া-হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকা। তার পর থেকেই বিস্তীর্ণ অংশে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বহু এলাকায় তৈরি হয় জলসঙ্কট। এ সবের জেরে বিভিন্ন জায়গায় ক্ষোভ-বিক্ষোভও দেখিয়েছেন এলাকাবাসী। এমনকি, ঘূর্ণিঝড়ের ৬ দিন পর এখনও অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ ও জলের সঙ্কট রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও বহু এলাকায় জল-বিদ্যুৎ ফেরতও এসেছে।
বিভিন্ন এলাকা জল-বিদ্যুৎহীন থাকার কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন স্বরাষ্ট্র সচিবও। তবে একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করছেন রাজ্য সরকারের কর্মীরা। কলকাতা ও বৃহত্তর কলকাতা এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সিইএসসি। রাজ্যের অন্যত্র এই কাজের দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার (ডব্লিউবিএসইডিসিএল)। দুই সংস্থার তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব জানান, ‘‘ডব্লিউবিএসইডিসিএল-এর ৫৮টি ট্রান্সমিশন সাব স্টেশন বিকল হয়েছিল। তার সব ক’টিই চালু করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে অকেজো হয়ে পড়া ২৭৩টি ডিস্ট্রিবিউশন সাব স্টেশনের মধ্যে ২৫৯টি মেরামত করে কাজ শুরু করা গিয়েছে।’’
ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ১০৩টির মধ্যে ৯৪টি পুর এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরে এসেছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘‘ডব্লিউবিএসইডিসিএল-এর মতে এই এলাকাগুলিতে সামগ্রিক ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা সম্ভব হয়েছে। তবে কিছু কিছু পকেট বিদ্যুৎহীন থাকতে পারে। সেই সব জায়গাতেও দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। বাকি ৯টি পুরসভায় আংশিক সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই ন’টি পুরসভা দুই ২৪ পরগনা এলাকার মধ্যে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুজালিতে। সেখানও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তাঁরা কাজ করছেন বলে ডব্লিউবিএসইডিসিএল কর্তৃপক্ষ সরকারকে জানিয়েছেন।’’ বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার জানানো তথ্য অনুযায়ী, হুগলি জেলায় ৯০ শতাংশ, পূর্ব মেদিনীপুরে ৫০ শতাংশ এবং নদিয়ায় প্রায় সর্বত্র পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র সচিব।
এ ছাড়া দুই ২৪ পরগনাতেও যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ চলছে।সিইএসসি-র অধীন শহর কলকাতার বিভিন্ন জায়গাতেও এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। তা নিয়ে এ দিনও বিক্ষোভ-অবরোধ হয়েছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম শহরতলিতে পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র সচিব। দক্ষিণ-পূর্ব শহরতলির মধ্যে রয়েছে ইএম বাইপাস লাগোয়া দু’পাশের এলাকাগুলি এবং পাটুলি, মুকুন্দপুর, পঞ্চসায়র, পাটুলি, বাঘাযতীনের কিছু অংশ। বেহালা, সরশুনা, পর্ণশ্রীর মতো এলাকাগুলি দক্ষিণ-পশ্চিম শহরতলির মধ্যে। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিইএসসি আমাদের জানিয়েছে, এই সব এলাকার প্রায় সর্বত্রই বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরানো গিয়েছে। কোনও কোনও অংশে বা পকেটে এখনও বিদ্যুৎহীন থাকতে পারে। সেই সব জায়গাতেও রাতদিন কাজ করছেন কর্মীরা। রাজস্থান থেকে কর্মী এনেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে।’’
বিদ্যুতের পাশাপাশি জলের সমস্যা কার্যত আরও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে। একে তো বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায় ট্যাঙ্কে জল তোলা যাচ্ছে না, আবার বিভিন্ন জলপ্রকল্পে বিদ্যুৎ না থাকায় পুরসভার সরবরাহও বিঘ্ন হচ্ছে। ফলে তীব্র জলকষ্টে ভুগেছেন বহু মানুষ। এখনও যে সেই সমস্যা সর্বত্র মিটেছে এমন নয়। তবে স্বরাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, ‘‘জল সরবরাহ এবং নিকাশি কেন্দ্রগুলির প্রায় সর্বত্র বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়েছে এবং সেগুলি কাজ করছে।’’ মোবাইলের টাওয়ার ভেঙে যাওয়া বা টাওয়ারে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় মোবাইল পরিষেবাও বিপর্যস্ত।
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থার ৮৫ শতাংশ স্বাভাবিক হয়েছে।’’পুনর্গঠনের পাশাপাশি ত্রাণের কাজও চলছে সমান্তরাল ভাবে। স্বরাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, ‘‘ইতিমধ্যেই ৫০ লক্ষ জলের পাউচ বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫০০টি জলের ট্যাঙ্ক কাজে লাগানো হচ্ছে। সমস্যার কথা জানালেই সেখানে ট্যাঙ্ক নিয়ে গিয়ে জল সরবরাহ করছেন রাজ্য সরকারের কর্মীরা।’’ এ ছাড়া স্থানীয় ভাবে ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। ত্রিপল ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করার কাজ চলছে। ত্রাণ বিলির কাজে হাত লাগিয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও।